অনেকই আছেন যানেন না ফাইভার কি?
কোনো লোকাল ট্রেনিং সেন্টার এ কাজ শিখেছেন এবং ফাইভারে একাউন্ট খুলেছেন, গিগ ও পাবলিশ করেছেন কিন্তু কাজ পাচ্ছেন না । গিগ র্যাঙ্ক করছে না, ইম্প্রেশন কম, ক্লিক নেই এমন আরো অনেক অসুবিধা । সেজন্যই এই লেখা!
আসুন শুরু করি একটু আগে থেকেই, এর আগে আমার দুইটি আইডি ডিজেবল হয়ে যায় ১৮০ ডলার ও ২৮ ডলার ব্যালেন্স সহ শুধুমাত্র ফাইভারের টার্মস এন্ড কন্ডিশন না জানার কারনে এবং ভায়োলেশনের কারনে এবং সেটা গত মাসেই ।
তো যারা শুরু করছেন, আমার একান্ত অনুরোধ আপনি যদি কোনো কাজ না পারেন, না শিখে থাকেন বা সেটাতে দক্ষ না হন, এখনই একাউণ্ট খোলার দরকার নেই । অনেক ট্রেনিং সেন্টার আছে, স্বল্পমূল্যে কোর্স করাচ্ছে, অবশ্যই ধোকাবাজদের থেকে সাবধান !!!!
ভালোমত খোজখবর নিয়ে, বর্তমান স্টুডেন্ট এবং আগের যারা কোর্স করেছে এবং এখন কাজ করছেন তাদের ফীডব্যাক নিয়ে ভর্তি হবেন, আর একটু বুদ্ধিমান হলে আপনি ইউটিউব/অনলাইন থেকেই অনেক কিছু শিখতে পারবেন ।
কোর্স করলেন, কাজ ও শিখলেন এবার কি ?
এবার আপনার কাজ, সেই কাজগুলো নিয়মিত প্র্যাকটিস করা, নয়তো ভুলে যাবেন যতই ভালো পারেন আর দক্ষ হোন ।
এরপর আমার অভিমত হোল, প্রত্যেকটা জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস যেমন, ফাইভার, আপওয়ার্ক, গুরু, পিপল পার আওয়ার এগুলোতে একাউণ্ট খুলবেন । অবশ্যই নিজের ছবি, আইডি এবং সঠিক তথ্য দিয়ে ।
আর হ্যা, একাউণ্ট খোলার সময় অবশ্যই টার্মস এন্ড কন্ডিশন গুলো ভালোমত পড়ে, নিজে না বুঝলে অন্য কারো কাছ থেকে বুঝে একাউণ্ট ওপেন করবেন ।
ইংরেজি দক্ষতা !
ফ্রীল্যান্স মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে হলে অবশ্যই! অবশ্যই আপনাকে ইংরেজি জানতে হবে এবং লিখতে পারতে হবে । নাহয় বায়ার/ক্লায়েন্ট কি বলছে তা আপনি বুঝবেন না, আর তাকে আপনার কথাও বুঝাতে পারবেন না । কাজ পেলেও লাভ হবেনা, কারন বায়ার ফীডব্যাক দিবে খারাপ যত ভালো কাজই করেন ।
গিগ র্যাঙ্ক, ইম্প্রেশন, ক্লিক, প্রোফাইল ও গিগ তৈরী এবং পাব্লিশ
গিগ র্যাঙ্ক এর বিষয়টা মূলত অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। কেউ যখন আমাকে প্রশ্ন করে, ভাই গিগ তো র্যাঙ্ক হচ্ছেই নাহ। তখন আমি সবার প্রথমেই তাকে জিজ্ঞেস করি আপনি প্রতিদিন ১০ টা বায়ার রিকুয়েস্ট পাঠাচ্ছেন তো? প্রায় সবারই উত্তর একই থাকে, আগে পাঠাতাম এখন আর পাঠাই না। যদি জিজ্ঞেস করি কেন পাঠান নাহ? তখন উত্তর দেয় পাঠিয়ে কোনো লাভ হয়না।
এখানে আরেকটা বিষয় সামনে আসে, আমরা বায়ার রিকুয়েস্ট আসলে কিভাবে লিখবো, অথবা কিভাবে বায়ার রিকুয়েস্ট পাঠালে বায়ার রিপ্লাই করবে। তো সেই বিষয়টা আমি পরবর্তী পর্বে আলোচনা করবো।
আজকে মূলত আলোচনা করব বায়ার রিকুয়েস্ট কি দেয়া বন্ধ করে দিবো? বায়ার রিকুয়েস্ট আসলে কাজে লাগে কিনা?
প্রথম কথা হলো, বায়ার রিকুয়েস্ট-ই হলো একমাত্র সহজ ভাবে অরগানিক ওয়ে-তে ক্লাইন্টদের কাছে পৌঁছানোর মাধ্যম। আরও অনেক ওয়ে আছে ক্লাইন্ট খুঁজে বের করার জন্য। কিন্তু ফাইভার খুব সুন্দর একটা সিস্টেম আমার এবং আপনার জন্য আগে থেকেই তৈরি করে রেখেছে বায়ার এর কাছে আমাদের অফার গুলো পৌঁছানোর জন্য।
ফাইভারে আপনি যদি বুঝে বায়ার রিকুয়েস্ট গুলো প্রতিদিন পাঠাতে পারেন তাহলে আপনার কাজ পাওয়ার সম্ভবনা অনেক গুন বেড়ে যাবে। এবার ধরেন কাজ পেলেন নাহ, কেউ নক করলোনা, তাহলে কি লাভ শুধু শুধু সময় নষ্ট করে বায়ার রিকুয়েস্ট দেয়ার, তাইনা?
অবশ্যই লাভ আছে। একটা কথা আছেনা “হাতি মরলেও লাখ টাকা, বাঁচলেও লাখ টাকা”। ফাইভার এর বায়ার রিকুয়েস্ট হলো সেই হাতির মতই। আপনি কাজ পেলে তো আলহামদুলিল্লাহ, আর না পেলেও অনেক লাভ।
(লাভ নাম্বার-১);
ধরেন আপনি একদিনে ১০টা বায়ার রিকুয়েস্ট দিলেন। তো ১০ জনের কেউ আপনাকে কাজ না দিলেও কয়েকজন ঠিকই আপনার রিকুয়েস্ট টা ওপেন করবে।
আপনি যে গিগ এর আন্ডার-এ রিকুয়েস্ট টা দিয়েছেন সেটা বা আপনার প্রোফাইল টা ভিজিট করবে। এতে আপনার প্রোফাইলের ক্লিক/ইম্প্রেশন বাড়বে। আর ক্লিক বা ইম্প্রেশন বাড়লে আপনার গিগ আস্তে আস্তে সামনে আসতে থাকবে। আর এই ক্লিক/ইম্প্রেশন এর সাথে অন্যান্য গ্রুপে আপনার আইডি বা গিগ শেয়ার এর ক্লিক/ ইম্প্রেশন এর তুলনা ভুলেও করবেন নাহ।
ওইখানে যাদের ক্লিকের কারনে আপনার ইম্প্রেশন বাড়ে তারা ৯৯% হলো সেলার। যাদের থেকে কাজ পাওয়ার সম্ভবনা ১% এরও কম। আর এইযে ফাইভার থেকে যে ক্লিক আর ইম্প্রেশন পেলেন সেটা বায়ার এর বদৌলতে। আর এখান থেকে ১০টা ক্লিক পেলে ১ টা কাজ পাওয়ার সম্ভবনা খুব-ই বেশি।
আর ঐযে বিভিন্ন গ্রুপের থেকে যে ক্লিক আর ইম্প্রেশন পেলেন তার থেকে কাজ পাওয়ার সম্ভবনা যেহেতু নাই বললেই চলে, সেহেতু ফাইভার ভাববে আপনার গিগ টা হয়ত ইন্টারেস্টিং কিন্তু আপনার গিগ টার কোথাও প্রবলেম আছে, সেজন্য হয়ত মানুষ ক্লিক করে কিন্তু অর্ডার দেয়ানা। তখনই আপনার গিগ পিছনে যেতে থাকবে।
(লাভ নাম্বার-২);
একটা কথা মনে রাখবেন, ফাইভার আপনার-আমার থেকেও চালাক। হ্যা ফাইভার হয়ত আমাদের মত চুরি-বাটপারি কম বুঝে। কিন্তু ভালো জিনিসগুলো ফাইভার আমাদের থেকেও বেশি বুঝতে পারে। একটা জিনিস খেয়াল করেন তো, আপনি যখন একটা পিসি তে দুইটা আইডি, অথবা একই আইপি দিয়ে দুইটা আইডি ব্যবহার করেন তখন ফাইবার কিন্তু আজ হোক, কাল হোক ধরে ফেলে।
আবার ধরেন আপনি ফাইভারের মেসেজ অপশনে তাদের কোনো একটা রুলস ভায়োলেট করলেন, ফাইবার কিন্তু সেটাও ধরতে পারে। এগুলো ধরার জন্য কিন্তু তারা ২৪/৭ মানুষ বসিয়ে রাখেনা। তাদের আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স টা সেভাবেই তৈরি করা যাতে মাক্সিমাম কাজগুলো অটোমেটিক্যালি হয়ে যায়। হ্যা, ফাইনাল ডিসিশন বা অন্যান্য কিছু কাজ তারা ম্যানুয়ালি করে থাকে।
তো যেই ফাইভারের এতো বুদ্ধি, সে কি জানেনা কোন আইডি টা আসলেই প্রতিদিন অ্যাক্টিভ থাকে আর কোন আইডি টা বিভিন্ন টুলস দিয়ে অ্যাক্টিভ আছে। আমি বলছিনা, টুলস দিয়ে অ্যাক্টিভ থাকা খারাপ বা ভালো। আমি বলছি ফাইভার সেটা বুঝে যে, কে আসলেই অ্যাক্টিভ আর কে জাস্ট আইডিতে রিফ্রেশার দিয়ে কাজ চালাচ্ছে। আর ফাইভার সেটা স্ট্রিক্টলি এখন পর্যন্ত নিষেধ ও করে নাই।
তো টুলস ব্যবহার করে অ্যাক্টিভ থাকবেন কিনা সেটা আপনার ইচ্ছা। আমার কথা হলো, আপনি যখন ১০ টা ব্যায়ার রিকুয়েস্ট পাঠাবেন প্রতিদিন, তখন ফাইভার বুঝবে আপনি আসলেই অ্যাক্টিভ। আর এটা বুঝার জন্য ফাইভারের কাস্টমার ম্যনেজম্যান্ট টিম আসবেনা। সেই কাজটা ফাইবারের আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজ্যান্স অটোমেটিক্যালি করে ফেলতে পারে। আর গিগ র্যাঙ্ক করার জন্য ফাইভারকে এটা বুঝানো খুবই জরুরি যে আপনি ফাইভারকে সময় দিচ্ছেন।
আর ফাইভার যখন দেখবে আপনি তাকে সময় দিচ্ছেন, দেখবেন ফাইভার-ও আপনাকে সময় দেয়া শুরু করবে। আর ফাইভার একবার আপনাকে সময় দিলে কি হতে পারে সেটা আপনার আসেপাশে চোখ রাখলেই বুঝতে পারবেন।