কিছু মানুষ আছেন যারা অন্য সবার চেয়ে অনেক বেশি স্মার্ট। বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, তারা অনেক বেশি বুদ্ধিও রাখেন। তবে স্মার্টনেস বা বুদ্ধিমত্তা মানুষের পরিবেশ, অভিজ্ঞতা এবং অন্যান্য উৎস থেকে গড়ে ওঠে।
তারপরও বিশেষজ্ঞরা চটজলদি নিজেকে স্মার্ট করে তুলে ধরার কিছু বৈজ্ঞানিক পন্থার খোঁজ দিয়েছেন। এর মাধ্যমে মস্তিষ্কের ক্ষমতার প্রদর্শনও ঘটাতে পারবেন।
প্রথমে কিছু ছোট বিষয় যেনে নেয়া যাক আমার ব্যাক্তিগত ধারনা থেকেঃ
১. কথা বলার সময় অতিরিক্ত ভঙ্গিমা না দেখানো।
২. যখন সবাই চুপ করে কারও কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে তখন আপনি বেখেয়াল হয়ে বা ইচ্ছে করে সবার মনোযোগ আকর্ষণের জন্য বা মনোযোগ নষ্ট করার জন্য এমন কিছু করবেন না, যা আপনাকে সবার কাছে বিরক্তিকর হিসেবে রিপ্রেজেন্ট করে।
৩. হুট করে ইংরেজি শব্দ দিয়ে কাউকে ছোট করতে চেষ্টা না করা।
৪. লেখার ক্ষেত্রে বানানের সঠিকতা মেনে চলা।
৫. চলার ক্ষেত্রে পুরো রাস্তা জুড়ে না হাঁটা বা অন্য কারও দিকে এমন ভাবে না তাকানো যা ওই পথচারীকে দ্বিধায় ফেলে দেয়।
৬. কারও অতি গোপনীয় বিষয় সবার সামনে জানতে চেষ্টা না করা।
৭. নিজেকে সবার চেয়ে ছোট মনে করা এবং সুযোগ পেলে নিজের অর্জিত জ্ঞানের মাধ্যমে সত্যকে রিপ্রেজেন্ট করা।
এছাড়াও, সত্যবাদী হওয়া, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা, হাসি মুখে কথা বলা, সিরিয়াস কোনো ব্যপারে ফানি মোডে না থাকা ইত্যাদি বহু দিক আছে যা আপনাকে স্মার্ট করে তুলতে পারে।
বুদ্ধিমান বা স্মার্ট করে তুলে ধরার কিছু বৈজ্ঞানিক পন্থার খোঁজ জেনে নেইঃ
১. রাস্তায় মানুষের মাঝে যখন হারিয়ে যাবেন তখনও নিজেকে স্মার্ট করে তুলতে পারেন। পথে সবাই সাধারণত যে গতিতে হাঁটেন একই গতিতে হাঁটবেন। গবেষণায় দেখে গেছে, সবার মাঝে থেকে বেশি গতিতে হাঁটলে তাকে দলের বাইরের কেউ বলে মনে করা হয়। আর সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চললে তাকে অনেক বেশি স্মার্ট মনে হয়।
২. গবেষণায় বলা হয়, যারা পাতলা গ্লাসের চশমা পড়েন তাদের কম আকর্ষণীয় লাগলেও বেশি বুদ্ধিমান মনে হয়। ইউনিভার্সিটি অব ভিয়েনার ওই গবেষণায় দেখা গেছে, যারা রিমলেস বা পাতলা ফ্রেম ও গ্লাসের চশমা পড়েন তাদের অনেক বেশি বুদ্ধিমান দেখায়।
৩. এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, যারা হাতে অ্যালকোহলের গ্লাস বা মগ ধরে থাকেন, তাদের বোকা দেখা যায়। আর যারা জুস বা অন্য কোনো পানীয়ের গ্লাস হাতে নিয়ে থাকেন, তাদের অনেক স্মার্ট দেখা যায় বলে জানান ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়া এবং মিশিগানের গবেষকরা।
৪. ইউরোপিয়ান জার্নাল অব সোশাল সাইকোলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বলা হয়, যারা নামের মাঝের অংশটি পুরো না লিখে আদ্যক্ষর ব্যবহার করেন, তাদের অনেক বেশি স্মার্ট ও প্রভাবশালী বলে মনে করা হয়।
৫. লেখনিতে যাদের ভোকাবুলারি ভালো, তাদের অনেক স্মার্ট ও বুদ্ধিমান মনে করা হয়। ২০১২ সালে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বলা হয়, অযথাই কঠিন ও বড় বড় শব্দ ব্যবহার না করে যারা সহজবোধ্য শব্দের বৈচিত্র্যময় প্রয়োগ ঘটাত পারেন তাদের স্মার্ট মনে করে মানুষ।
৬. ২০১৪ সালের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অ্যানার টাল এবং ব্রিয়ান ওয়ানসিঙ্ক জানান, দৃশ্যমান এবং গন্ধযুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে যারা তথ্য উপস্থাপন করেন তাদের অন্যদের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান মনে করা হয়। বিজ্ঞানসম্মতভাবে তথ্য উপস্থাপনের মধ্যে গ্রাফিক খুব আকর্ষণীয় এবং কার্যকর।
৭. একঘেয়ে স্বরে নিরসভাবে বক্তব্য উপস্থাপন মানুষের নজর কাড়ে না। কিন্তু ব্যাখ্যামূলক বক্তব্য অঙ্গভঙ্গি সহায়তায় প্রকাশ করা হলে বক্তাকে অনেক বেশি স্মার্ট বলে মনে করা হয়। কথা বলার সময় কণ্ঠের উত্থান-পতনের মাধ্যমেও নিজেকে স্মার্ট করে তুলে ধরা যায়।
৮. ২০০৭ সালে লয়োলা মেরিমাউন্ট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর নোরা এ মার্ফির এক গবেষণায় বলা হয়, চোখে চোখ রেখে কথা বলায় স্মার্টনেস প্রকাশ পায়। তিনি বলেন, চোখে চোখ রেখে কথা বলা কার্যকর আন্তযোগাযোগের অন্যতম উপায়। এটা বুদ্ধিমত্তার প্রকাশ বলেও মনে করা হয়।
৯. একই বছরে নোরা মাফির আরেকটি গবেষণায় বলা হয়, আত্মবিশ্বাসী আচরণ মানুষকে যথেষ্ট স্মার্ট করে তোলে। অন্যান্য কিছু গবেষণাতেও বলা হয়েছে, আত্মবিশ্বাসী আচরণ মানুষকে বুদ্ধিমান প্রমাণ করে।
১০. রুচিশীল ও গ্রহণযোগ্য পোশাকেরও মানুষ স্মার্ট হয়ে ওঠে। যেমন- শিক্ষক যদি ফরমাল পোশাকে ক্লাসে আসেন তবে তাকে অনেক বেশি বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা। ২০১২ সালে নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়, যারা ডাক্তারদের মতো সাদা ল্যাব কোট পরেন তাদের অনেক বেশি বুদ্ধিমান বলে ধরে নেওয়া হয়।
১১. ২০১৪ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, আন্তরিক হাসির মাধ্যমেও মানুষ অনেক বেশি স্মার্ট ও বুদ্ধিমান হয়ে উঠতে পারে। আনন্দের প্রকাশভঙ্গিতে স্মার্টনেস ফুটে ওঠে মানুষের মাঝে।
১২. মুখে অনেকে নানা ধরনের অলংকার পরে থাকেন। ২০১২ সালে অ্যাংলিয়া রাস্কিন ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় বলা হয়, যারা মুখে অংলকার পরেন তাদের আইকিউ কম বলে ধরে নেওয়া হয়।
১৩. ছোট পরিসরের এক গবেষণায় বলা হয়, মোক্ষম সময়ে সেন্স অব হিউমারের প্রকাশ স্মার্টনেস ও বুদ্ধিমত্তার প্রকাশ ঘটায়। ছেলেদের এ ধরনের সেন্স অব হিউমারে আকৃষ্ট হন নারীরা। ওই পুরুষ তাদের চোখে স্মার্ট হয়ে ওঠেন।
১৪. ২০০২ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, যারা নেতৃত্ব স্থানে চলে যান তাদের স্বাভাবিকভাবেই অনেক বুদ্ধিমান ও স্মার্ট বলে মনে করা হয়। ছোট ছোট দলের প্রধানকেও সেই দলের সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমান বলে মনে করা হয়।
১৫. ১৯৯৯ সালে দুই মনোবিজ্ঞানীর গবেষণায় বলা হয়, যা জানেন না তার স্বীকার করে নেওয়া স্মার্টনেসের লক্ষণ। বলা হয়, বুদ্ধিমান ও স্মার্টরাই নিজের জ্ঞানের সীমানা প্রকাশ করতে পারেন। এর মাধ্যমে এক ধরনের সততাও প্রকাশ পায়।
সূত্র : বিজনেস ইনসাইডার
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক ও ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করার অনুরোধ রইলো
আরও পড়ুনঃ
এসেক্সুয়ালিটি কি এবং কেন হয় ? এটি কি কোনো রোগ ?
বুদ্ধিমান মানুষ হওয়ার সহজ কিছু কৌশল জেনে নেই!
কিভাবে বুঝবেন আপনার কাছের মানুষ মানসিক রোগ এ আক্রান্ত কি না?