ধুমকেতু এর শেষ পরিণতি কী হয়? কোথায় গিয়ে শেষ হয় ধুমকেতুর জীবন ?

এর আগে আমরা জেনেছি কিভাবে ধুমকেতু জন্ম হয় এবং কিভাবে নামকরন করা হয়,

এ পর্বে আমরা কথা বলব ধুমকেতু শেষ পরিনতি নিয়ে :

কুইপার বেল্ট ও ওর্ট মেঘে থাকা অবস্হায় ধুমকেতুগুলো মোটামুটি সুস্থ অবস্থায় থাকে।
কিন্তু যখন তাদের সে কক্ষপথ পরিবর্তিত হয়ে সৌরজগতের ভেতরে সুর্যের দিকে অগ্রসর হতে থাকে তখন থেকেই তাদের অবস্হা অস্থিতিশীল হয়ে যায়।
সুর্যের নিকট প্রথম আবর্তনটি সম্পন্ন করতে পারে এবং এরপর পুনরায় তার উৎপত্তিস্হল ওর্ট মেঘ বা কুইপার বেল্টে চলে যায়।
এরপর দ্বিতীয়বার যখন আবার আবর্তনরত অবস্হায় সূর্যের নিকটতম স্হান তথা তার অনুসূর অবস্থানে আসে তখন
অনেক সময় সুর্যের গ্র্যাভিটিতে আটকা পড়ে তা আর মুক্তি পেয়ে পুনরায় যেতে পারে না, সূর্যে পতিত হয়।

 

সরাসরি সুর্যের কাছে আসতে পারে সাধারনত সেসব ধুমকেতু যেগুলো তাদের আবর্তনের গতিপথে অন্য কোন বস্তুর সাথে সংঘর্ষ বা কোন গ্রহের মহাকর্ষীয় প্রভাবে পড়ে নি।
যখন কোন ধুমকেতু সৌরজগতের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করার সময় কোন গ্রহের মহাকর্ষীয় প্রভাবের ভেতর পড়ে তখন তিন ধরনের ঘটনা ঘটতে পারেঃ

1) ধূমকেতুটি সরাসরি গ্রহে পতিত হবে এবং তার জীবনকালের সমাপ্তি তখনই ঘটবে।

2) গ্রহটির মহাকর্ষ তাকে প্রচন্ডবেগে ধাক্কা দেয়।
এতে ধুমকেতুটির আবর্তন গতি ও গ্রহের মহাকর্ষ কর্তৃক প্রযুক্ত ধাক্কার বেগ দুইএ মিলে এটি এতো বেশি গতিপ্রাপ্ত হয় যে সরাসরি তা সৌরজগত অতিক্রম করে চলে যেতে পারে।

3) অথবা, তার কক্ষপথ পরিবর্তিত হয়ে স্বল্প আবর্তনকাল বিশিষ্ট কক্ষপথে রুপান্তরিত হবে।
এমতাবস্থায়, পরবর্তীতে ধুমকেতুটি আর কয়েক হাজার বছর টিকে থাকে এবং সুর্যের চারপাশে তা যতোবার আবর্তন করবে
ততোবারই তার কিছু কিছু গাঠনিক বস্তু তথা ভর বিচ্ছিন্ন হয়ে হারাতে থাকে। পৃথিবী যখন সে কক্ষপথের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করে তখন সেসব ফেলে যাওয়া বস্তুর সাথে সংঘর্ষও হয়।

আসুন একটু বিশদ ভাবে জেনে নেয়া যাক ধুমকেতুর শেষ পরিণতি সম্পর্কে:

ধুমকেতুগুলো যতোবার সুর্যের চারপাশে আবর্তন করে এবং এতে যতোবার তারা সুর্যের নিকটবর্তী হয়, তাদের প্রত্যেক এ অনুসুর অবস্হানে কিছু কিছু মাত্রায় ভর হারায়।
সাধারনত একটি ধুমকেতু তার প্রত্যেক অনুসুর অবস্হানে তার মোট ভরের ৬০ ভাগের ১ ভাগ থেকে ১০০ ভাগের ১ ভাগ পর্যন্ত ভর হারায়।
এভাবে গড়ে একটি ধুমকেতুর বরফীয় অংশ সম্পুর্নরুপে নিঃশেষ হতে প্রায় ১০০ বার আবর্তন সম্পন্ন করতে পারে।

হ্যালির ধূমকেতু এখন পর্যন্ত প্রায় ২৭ বার আবর্তন করেছে সূর্যকে৷

এ হিসেবে হ্যালির ধুমকেতুর বরফ অংশ সম্পুর্ন রুপে নিঃশেষ হতে হতে আরও তা প্রায় ৭৩ বার আবর্তন করতে পারবে।
সুতরাং, এ হিসেবে হ্যালীর ধুমকেতু আর মোটামুটি ৭৩×৭৬= ৫৫৪৮ বছর সক্রিয় থাকবে।
এরপর তার বরফঅংশ বাষ্পীভূত হয়ে যাবে এবং তার নিউক্লিয়াস অংশটি তার বরফ অংশ হারিয়ে গ্রহানু সৃদশ বস্তুতে পরিণত হবে।
ধুমকেতু তার লেজ বা তার বৈশিষ্ট্যসুচক রুপ ধারনই করে মুলত তার বরফ অংশের কারণে।
তাই, এটি যখন নিঃশেষ হয়ে যায় ধুমকেতুও তার রুপ হারিয়ে ফেলে এবং তা গ্রহানুসদৃশ বস্তুতে পরিণত হয়।

আজ এ পর্যন্তই  ভালো লাগলে লাইক করুন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
পড়ার  জন্য ধন্যবাদ

আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের ভিডিও গুলো দেখতে এখানে ক্লিক করুন

ধুমকেতু গুলো ঠিক কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিলো, ধুমকেতুর নামকরণ করা হয় কিভাবে?

সুর্যের চারপাশে আবর্তনরত ধুমকেতুগুলোকে দুভাগে ভাগ করা যায়।

i) স্বল্পস্হায়ী ধূমকেতু (Short Period Comet) এবং

ii) দীর্ঘস্হায়ী ধূমকেতু (Long Period Comet)।

সৌরজগতে ধুমকেতুগুলো অতীতে ঠিক কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিলো তা বেশ অজানা।
তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় ধারনা করা হয়, সৌরজগত সৃষ্টির সময়ই ধূমকেতুগুলো কোনভাবে সৃষ্টি হয়েছিলো
এবং সেগুলো স্হায়ীভাবে সৌরজগত সৃষ্টির পর অবশিষ্ট বস্তু দ্বারা গঠিত কুইপার বেল্ট এবং ওর্ট মেঘেই অবস্হান করছে।
ধারনা করা হয়, স্বল্প মেয়াদী কক্ষপথের ধূমকেতুগুলোর সৃষ্টি হয় কুইপার বেল্ট থেকে এবং দীর্ঘ কক্ষপথের ধুমকেতুগুলো সৃষ্টি হয় ওর্ট মেঘ থেকে।
কুইপার বেল্ট ওর্ট মেঘ থেকে সুর্যের নিকটবর্তী হওয়ায় সেখান থেকে আসা ধুমকেতুর সুর্যকে আবর্তন করতে সময় লাগে কম।

এরকম ধুমকেতুর একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরন হলো হ্যালির ধূমকেতু, যার আবর্তন কাল প্রায় ৭৬ বছর।
আর, তাই তা ৭৬ বছর পর পর সুর্যের নিকটবর্তী হয় এবং তাকে আমরা দেখতে পাই।
কিন্তু ওর্ট মেঘ অনেক দুরে থাকায় সেখান থেকে আসা ধুমকেতুগুলোর আবর্তনে সময়ও লাগে অনেক।
এমনকি অনেক ধূমকেতুর তা কয়েক মিলয়ন বছরও লেগে যায়।
যেমনঃ হায়াকুটেক (Comet Hyakutake) ধুমকেতু প্রায় প্রতি ৭০,০০০ বছরে সুর্যকে প্রদক্ষিণ করে।
আর তাই তাকে আমরা প্রতি ৭০,০০০ বছর পর পর দেখতে পাবো।
সুদুর অতীত থেকেই ধুমকেতুগুলো সৌরজগতের এসব দুরবর্তী অন্ঞ্চলে থেকে সুর্যকে একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে চলেছে।
স্বল্পমেয়াদী ধূমকেতুগুলোর আবর্তনকাল সাধারনত ২০০ বছরের মধ্যেই হয় এবং দীর্ঘমেয়াদী ধুমকেতুগুলোর তা ২০০ বছর হতে বহু হাজার বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে।

.ধুমকেতুর নামকরণ করা হয় যেভাবে:

ধুমকেতুর নামকরণ করা হয় সাধারনত তার আবিষ্কারকের নামানুসারে৷
যেমনঃ এডমন্ড হ্যালি কতৃক আবিষ্কৃত ধুমকেতুর নাম রাখা হয় Hally’s Comet,
ক্যারোলিন শোমেকার এবং ডেভিড লেভি কতৃক আবিষ্কৃত ধুমকেতুর নামকরন করা হয় Shoemaker-Lavy-9।
তবে আবার বিভিন্ন মিশন চালনার মাধ্যমেও ধুমকেতু শনাক্ত করা হয়। তখন তাদের নামকরণ করা হয় সেসব মিশনের নামানুযায়ী।

যদি কোন ধুমকেতু কোনভাবে দু’জন কতৃক আবিষ্কৃত হয় তবে প্রথম আবিষ্কারকর্তার নামেই ধুমকেতুর নামকরন করা হয়।
কোন ধুমকেতুর নামের পুর্বে যদি “C” উল্লেখ থাকে তবে এ দ্বারা বোঝায় ধুমকেতুটি Long Period Comet, যার আবর্তনকাল ২০০ বছরের বেশি।
যদি নামের আগে “P” থাকে তবে এর মানে ধুমকেতুটি Short period comet এবং periodic,
যার দ্বারা বোঝায় ধূমকেতুটির আবর্তনকাল ২০০ বছরের কম এবং তা নির্দিষ্ট সময় পর পর পুনরায় সুর্যের নিকট আসে।
যেমনঃ হ্যালির ধুমকেতু। যদি নামের আগে “D” থাকে তা দ্বারা বোঝায় “Destroyed”, এর মানে ধুমকেতুটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
যেমনঃ D/Shoemaker-Levy 9, এটি ধ্বংস হয়ে যাওয়া ধুমকেতু।
এরকমভাবে ধুমকেতুর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিভিন্ন কিছু অক্ষরযুক্ত করে এদের নামকরন করা হয়।

পৃথিবীতে পানির প্রাথমিক উৎস হিসাবে ধুমকেতুকেই দায়ী করা হয়।
সুদুর অতীতে সৌরজগতের গ্রহগুলো সৃষ্টির সময় পৃথিবীতে অনেক ধুমকেতু আছড়ে পড়তো এবং এতে ধূমকেতুতে থাকা পানি জমা হতে থাকে পৃষ্ঠে।
এতে করেই পৃথিবীতে পানির সন্ঞ্চারণ ঘটে।
তবে সমস্ত পানির উৎস না হলেও নূন্যতম সাগর মহাসাগরের পানির প্রধান অংশই ধুমকেতু থেকে এসেছে বলে গবেষণায় পাওয়া গেছে।
আপনি কি মনে করেন এ ব্যাপারে তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না,
আজ এ পর্যন্তই , ভালো লাগলে লাইক করুন,বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
আর এমনি মজার সব তথ্য পেতে আমাদের  সাবস্ক্রাইব করে দিন
সবসময়ের মতই পড়ার জন্য ধন্যবাদ

আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন এবং আমাদের ভিডিওগুলো দেখতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি ঘুরে আসুন

Read More:

প্যারালাল ইউনিভার্স কি? প্যারালাল ইউনিভার্স সম্পর্কে বিস্তারিত