Jojobet kayseri hurdacılar medyum student porno blonde porno creampie porno sister porno massage porno sleeping porno

উনবিংশ শতাব্দী সময়ের আজব সব চিকিৎসা ব্যাবস্থা ও অপারেশন পদ্ধতি

উনবিংশ শতাব্দী এর অপারেশন থিয়েটার গুলোর পরিবেশ হতো নোংরা, অবর্ণনীয় যন্ত্রণায় কাতর রোগীদের কান্না চিৎকার চেঁচামেচিতে-পূর্ণ ভয়াবহ ব্যাপার ছিল, তখন অনুভূতিনাশকের ব্যবহার হয়নি।

 

চেতনানাশক না থাকার কারণে উনবিংশ শতাব্দী তে অস্ত্রোপচারে দক্ষতার চেয়ে দ্রুততা বেশি গুরুত্ব পেত। কোন সার্জন কত দ্রুত অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করতে পারত, তার উপর ভিত্তি করে তার সাফল্য এবং সুনাম ছড়িয়ে পড়ত।
ফলে এমন অনেক সার্জন সে সময় খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, যাদের আসলে কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতাও ছিল না। এরকম একজন বিখ্যাত অস্ত্রোপচারকারী ছিলেন রবার্ট লিস্টন, যিনি মাত্র ৩০ সেকেন্ডে আহত রোগীর পা কেটে ফেলার ব্যাপারে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন!
এক কুখ্যাত অপারেশনের সময় তিনি এত দ্রুত রোগীর শরীরের অঙ্গচ্ছেদ করছিলেন যে, বেখেয়ালে হাতের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার এক সহকারীর হাতের আঙ্গুল কেটে গিয়েছিল এবং একজন দর্শকের কোট ফেঁড়ে গিয়েছিল।
কথিত আছে, দর্শকটি ভয়েই মৃত্যুবরণ করেছিল, অন্যদিকে রোগী এবং সহকারীর গ্যাংগ্রীন ইনফেকশন হয়ে গিয়েছিল!
আরেক রোগী মূত্রাশয়ের পাথর অপসারণ করাতে লিস্টনের কাছে এসে অপরাশেন থিয়েটারের পরিবেশ এবং লিস্টারের ক্ষিপ্রতা দেখে ভীত হয়ে বাথরুমে ঢুকে দরজা আটকে দিয়েছিল। ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার বিশালদেহী লিস্টন বাথরুমের দরজা ভেঙে তাকে বের করে এনেছিলেন এবং বিছানার সাথে তাকে বেঁধে এরপর অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেছিলেন।
উনবিংশ শতাব্দী তে চিকিৎসকদের আণুবীক্ষণিক জীবাণু এবং তাদের সংক্রমণ প্রণালী সম্পর্কে কোনো পরিষ্কার ধারণা ছিল না। চোখে দেখা যায় না, এরকম অনুজীবের কারণেও যে রোগীর মৃত্যু ঘটতে পারে, তার সাথে চিকিৎসকরা পরিচিত ছিলেন না। ফলে হাসপাতাল কক্ষগুলোতে রোগীদের আশেপাশেই পোকামাকড় এবং কীটপতঙ্গ ঘুরে বেড়াত। কিছু কিছু হাসপাতাল অবশ্য পোকামাকড় নির্মূল করার জন্য কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছিল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই কর্মচারীদের বেতন ছিল সার্জনদের চেয়েও বেশি!
সেই যুগে চিকিৎসকদের পরনে থাকত রক্তমাখা অ্যাপ্রন। অ্যাপ্রন পরিবর্তন তো দূরের কথা, তারা পরপর একাধিক অস্ত্রপচারের মাঝের সময়ে নিজেদের রক্তমাখা হাতও পরিষ্কার করতেন না। একই ছুরি-কাঁচি দিয়ে একের পর এক অস্ত্রপচার করে যেতেন। তাদের ধারণা ছিল, পরিষ্কার করার পরে তো আবারও রক্ত লাগবে, তাহলে পরিষ্কার করে কী লাভ! অ্যাপ্রনের রক্ত পরিষ্কার না করার আরেকটি কারণ ছিল, যার অ্যাপ্রনে যত বেশি রক্ত থাকত, তাকে তত চাহিদাসম্পন্ন সার্জন হিসেবে দেখা হতো।
অধিকাংশ রোগীই রক্তের অভাবে অথবা অস্ত্রোপচার পরবর্তী ইনফেকশনের কারণে মৃত্যুবরণ করত। অস্ত্রপচারের পরে রোগীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা এত কম ছিল যে, হাসপাতালগুলো প্রায়ই রোগীদেরকে অগ্রীম টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য করত। লন্ডনের কিছু কিছু হাসপাতালে সে সময় অপারেশন পরবর্তী মৃত্যুর হার ছিল ৮০ শতাংশের চেয়েও বেশি।
সেই যুগে অস্ত্রপচার ছিল একইসাথে দর্শনীয় একটি ব্যাপার। অনেকেই সে সময়ের চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতি সম্পর্কে উৎসাহের কারণে অস্ত্রোপচারগুলো স্বচক্ষে দেখার জন্য হাসপাতালে যেত। তবে এছাড়াও টেলিভিশন এবং সিনেমা আবিষ্কার হওয়ার পূর্বে সে সময় অনেকেই জীবন-মৃত্যুর মধ্যকার সংগ্রাম উপভোগ করার জন্য হাসপাতালগুলোতে ভিড় জমাত। কিছু কিছু হাসপাতালে টিকেট কেটে অপারেশন দেখানোর বন্দোবস্তও ছিল।
চেতনানাশক না থাকায় রোগীদেরকে সে সময় অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করতে হতো। ফিটজহ্যারিস তার গবেষণায় দেখতে পান, শুধু রোগীরা না, তাদের কষ্ট এবং আর্তনাদ দেখে অনেক সময় সার্জনরাও ভেঙ্গে পড়তেন এবং কাঁদতে শুরু করতেন।
১৮৪০ সালে এরকম অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে যাওয়া এক মহিলা তার মেয়ের কাছে লেখা একটি চিঠিতে অপারেশনটিকে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, অপারেশনের পূর্বে সার্জন তার রুমে এসে তাকে ছুরি দেখিয়ে বলেছিল মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হতে।
উনবিংশ শতাব্দী এর শেষভাগে অস্ত্রোপচার প্রযুক্তি ধীরে ধীরে উন্নতি লাভ করতে শুরু করে। ১৮৪৬ সালে ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালে জন কলিন্স ওয়ারেন সর্বপ্রথম ইথার গ্যাস ব্যবহার করে রোগীকে অনুভূতিশূণ্য করে অপারেশন পরিচালনা করেন।

 

ফলে সার্জনদের সামনে দ্রুত অপারেশনের পরিবর্তে ধীরে-সুস্থে ঠান্ডা মাথায় জটিল অপারেশনের পথ উন্মুক্ত হয়। কিন্তু প্রথম দিকে অনেকদিন পর্যন্ত এর কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। বরং এর ফলাফল হয়েছিল আরো ঋণাত্মক। কারণ দীর্ঘসময় ধরে অপারেশন করার অর্থ ছিল রোগ-জীবাণুগুলোকে কাটা এবং ক্ষতস্থানে বিস্তার লাভ করার জন্য আরো বেশি সময় দেওয়া।
এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটে, যখন জোসেফ লিস্টার নামে এক অল্পবয়সী সার্জন লুই পাস্তুরের ব্যাকটেরিয়ার আবিষ্কার সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করার পরে হাসপাতালে রোগীদের অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ হিসেবে অদৃশ্য জীবাণুর ধারণা দেন এবং বলেন যে, এই জীবাণুগুলোর কারণেই অস্ত্রোপচার সফল হওয়ার পরেও অনেক রোগীই শেষ পর্যন্ত ইনফেকশন হয়ে মারা যাচ্ছে।
জীবাণু প্রতিরোধের জন্য তিনি বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন এবং সর্বপ্রথম কার্বলিক এসিডের মাধ্যমে ক্ষতস্থান এবং ছুরি-কাঁচি পরিষ্কার করে জীবাণু দূর করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।
১৮৬৫ সালে তিনি সর্বপ্রথম জীবাণুনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে অস্ত্রোপচার পরিচালনা করেন। প্রথমদিকে অবশ্য এই অদৃশ্য জীবাণু এবং তাকে প্রতিরোধের জন্য জীবাণুনাশক হিসেবে রাসায়নিকের ব্যবহারের ধারণা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করাতে তাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল।
কিন্তু কলিন্স এবং লিস্টারের দুটি ভিন্ন ভিন্ন আবিষ্কার শেষপর্যন্ত অস্ত্রোপচারের সফলতার হার এবং রোগীদের কষ্ট লাঘবের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখে।
– দ্য বুচারিং আর্টস, আর বাংলা।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক দিয়ে সাথে থাকুন দেখুন আমাদের ভিডিওগুলো দেখুন এখানে ক্লিক করুন

নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী।দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ও একমাত্র মহিলা নওয়াব

” ব্রিটিশদের দেওয়া বেগম উপাধি গ্রহণ করেননি, শেষ পর্যন্ত নওয়াব উপাধি দিতে হয়েছে এই নারীকে!

 

নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ও একমাত্র মহিলা নওয়াব ও নারীশিক্ষার পথিকৃৎ। তিনি অনেকটা নিজের অদম্য ইচ্ছার কারণে শিক্ষিত হন। শিক্ষা, সমাজকল্যাণ ও সেবাব্রতে তিনি যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তা ইতিহাসে বিরল ।

জন্মঃ

নওয়াব ফয়জুন্নেসা (১৮৩৪-১৯০৩)  জমিদার, নারীশিক্ষার প্রবর্তক, সমাজসেবক ও কবি। নওয়াব ফয়জুন্নেসার জন্ম কুমিল্লা জেলার হোমনাবাদ পরগনার (বর্তমানে লাকসামের) অন্তর্গত পশ্চিমগাঁয়ে । তিনি ১৮৩৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন । তার বাবা জমিদার আহমেদ আলী চৌধুরী আর মা আরাফান্নেসা চৌধুরাণী। তাঁর পিতা আহমদ আলী চৌধুরী ছিলেন হোমনাবাদ-পশ্চিমগাঁও-এর জমিদার।

পারিবারিক পরিবেশে গৃহশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে বাড়িতেই তিনি শিক্ষালাভ করেন। মুসলমানদের কঠিন পর্দাপ্রথার মধ্যে থেকেও ফয়জুন্নেসা আরবি, ফারসি ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায়ও ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন।

 

ব্যক্তিগত ও কর্মজীবন

প্রথম জীবনঃ

ফয়জুন্নেসা বাবার প্রথম কন্যাসন্তান। জমিদার বংশের সন্তান হিসেবে বেশ আরাম-আয়েশের মধ্য দিয়ে তিনি বেড়ে ওঠেন। মোগল রাজত্বের উত্তরসূরী এই মহীয়সী নারীর ছিল দুই ভাই (এয়াকুব আলী চৌধুরী এবং ইউসুফ আলী চৌধুরী) আর দু’বোন (লতিফুন্নেসা চৌধুরাণী এবং আমিরুন্নেসা চৌধুরাণী)।

ছোটবেলা থেকে লেখাপড়ায় তার প্রচুর আগ্রহ দেখে ফয়জুন্নেসার বাবা মেয়ের জন্য গৃহশিক্ষক নিযুক্ত করেন। তিনি কঠোর নিয়মানুবর্তিতা পালন করে তার জ্ঞানস্পৃহাকে আরো উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করে তোলেন। গৃহশিক্ষকের সাহায্যে ফয়জুন্নেসা খুব দ্রুতই কয়েকটি ভাষার উপর গভীর জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হন। বাংলা, আরবি, ফার্সি ও সংস্কৃত এ চারটি ভাষায় ব্যুৎপত্তি লাভ সহ ফয়জুন্নেসার এ প্রতিভা স্ফুরণে তার শিক্ষক তাজউদ্দিনের অবদান অতুলনীয়।

বিয়েঃ

১৫ বছর বয়সী কিশোরীর শরীর জুড়ে ছিল রূপ-লাবণ্যের ঢেউ। টানা টানা চোখ, হরিণীর মতই সদা চন্চল। বাবা ছিলেন কুমিল্লা অন্চলের (তৎকালীন ত্রিপুরা) পশ্চিমগাঁওয়ের (বর্তমান লাকসাম)বিরাট জমিদার।
অল্প বয়সেই কিশোরীর বিয়ের প্রস্তাব আসে ভাউকসারের জমিদার গাজী মোহাম্মদ চৌধুরীর কাছ থেকে।
পশ্চিমগাঁওতে জমিদারির কাজে এসে তিনি কিশোরীকে দেখে পছন্দ করেন। পরে বিয়ে হয়। ফুটফুটে দুটি মেয়েও হয়। তখন তিনি পরিপূর্ণ যুবতী।

জমিদারি লাভঃ

বিয়ের ১৭ বছর পর জানতে পারেন, তার স্বামীর আরেকটি বউ আছে। বিষয়টি তাঁর আত্মসম্মানে লাগে। তিনি প্রতারিত বোধ করেন। স্বামীকে স্পষ্টত জানিয়ে দেন, সতীনের সঙ্গে ঘর করার জন্য জন্ম হয়নি তার। তিনি স্বামীর বাড়িতে আর ফিরে যাবেন না।
এরই মধ্যে বাবা মারা যাওয়ায় তিনি নিলেন পৈতৃক জমিদারির দায়িত্ব। এ নিয়ে তার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু এক সময় বাবার সান্নিধ্যে কাজ শেখা তার মজ্জাগতই ছিল। তিনি সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগান সফলভাবে। সারাদেশে তিনি ছিলেন একমাত্র মহিলা জমিদার।

স্বীকৃতিঃ

সেসময় ত্রিপুরার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন মি.ডগলাস। একদিন তিনি খেয়াল করলেন ত্রিপুরা অঞ্চল শিক্ষা ও উন্নয়ন খাতে ভীষণ অবহেলিত। তিনি এই খাতে অর্থ বরাদ্দ চান ব্রিটিশ সরকারের কাছে।কিন্তু সেই অর্থ নির্ধারিত সময়ে আসছে না। ডগলাস সাহেব চিন্তিত হলেন।
সিদ্ধান্ত নিয়ে ডগলাস স্থানীয় ১০জন জমিদারের কাছে ঋণ হিসাবে ১০ হাজার টাকা করে ১ লাখ টাকা চাইলেন। কিন্তু কেউই এতো অল্প সুদে অর্থ দিতে রাজি হলেন না।একে একে সব আশা যখন শেষ হয়ে গেল তখন হঠাৎ একদিন এই নারী জমিদারের নায়েব পুটুলি ভর্তি নগদ ১ লাখ টাকা নিয়ে এসে ডগলাসের হাতে দিলেন।
ডগলাস খুব আনন্দিত এবং নিশ্চিন্ত হলেন। তিনি কালবিলম্ব না করে নায়েবের সাথেই রওনা হয়ে জমিদারের বাড়িতে গেলেন ঋণের চুক্তি করতে। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটকে বিস্মিত করে জমিদার নারীটি বললেন –
“আমি কাউকে ঋণ দিই না। আপনার পরিকল্পনা জনহিতকর। এটা নিশ্চিত হয়েই এই টাকা ত্রিপুরার কল্যাণে আমি দান করলাম।”
ডগলাস কৃতজ্ঞচিত্তে ফিরে গেলেন এবং জানলেন যে এই নারী জমিদার জনকল্যাণমূলক অসংখ্য কাজ করেছেন এবং প্রতিনিয়ত করে চলেছেন।
ডগলাস এইসব কথা জানিয়ে ইংল্যান্ডে মহারানী ভিক্টোরিয়াকে পত্র পাঠালেন। রাণী ভিক্টোরিয়া এই জমিদারকে “বেগম” উপাধি দিলেন। কিন্তু ফয়জুন্নেসা জমিদার এই উপাধি প্রত্যাখ্যান করলেন।
কারণ অন্য জমিদারদের যেখানে ‘নওয়াব’ উপাধি দেয়া হয় সেখানে তাকে কেন ‘বেগম’ উপাধি দেয়া হবে? উপাধির কোন জেন্ডার থাকা উচিৎ নয়।
ভিক্টোরিয়া এই প্রত্যাখানের খবর পেয়ে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করে ত্রিপুরায় পাঠালেন। তদন্ত কমিটি এসে নানা বিষয়ে তদন্ত করে একদিন সেই তেজী নারী জমিদারের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে দেখেন, জমিদার হাতিতে চড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তিনি কোথাও কাজে যাবেন, সেখানে তাকে নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছুতে হবে।তদন্ত কমিটি জমিদারের কাছে সময় চাইলে জমিদার বললেন –”আমি পূর্ব নির্ধারিত কাজে যাচ্ছি, এখন আপনাদের সময় দেয়া সম্ভব নয়।” আর কথা না বাড়িয়ে সময়নিষ্ঠ জমিদার তাঁর কাজে রওনা হয়ে গেলেন।
ব্রিটিশ তদন্ত কমিটি হতবাক হয়ে গেল নেটিভ এই জমিদারের সময়ানুবর্তীতা, তেজস্বী মনেভাব ও অহংকার দেখে !! এবং তারা ফিরে গিয়ে ভিক্টোরিয়াকে জানালেন সব কথা। এইবার রানী ভিক্টোরিয়া আর ভুল করলেন না। প্রবল ব্যক্তিত্বময়ী এই জমিদারকে “নওয়াব” উপাধি দিলেন।
১৮৮৯ সালে ব্রিটিশ সরকার পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা ব্যয় করে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে কুমিল্লায় এই জমিদারকে সম্বর্ধনা দিলেন। তিনি হলেন বাংলার প্রথম নারী “নওয়াব”। মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর সমস্ত ভূসম্পত্তি জাতির সেবায় দিয়ে যান
তিনি কেবল জনহিতকর কাজই করেননি, নারী শিক্ষা,নারী উন্নয়নমূলক অসংখ্য কাজ করেছেন। ছিলেন সুশিক্ষিত, চারটি ভাষা জানতেন। ছিলেন একজন সুসাহিত্যিকও।

সাহিত্য চর্চাঃ

রবীন্দ্রযুগে যে কয়জন বাংলা সাহিত্য সাধনা করে যশ ও খ্যাতি অর্জন করেন, নওয়াব ফয়জুন্নেসা তাদের মধ্যে অন্যতম। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম সাহিত্যিক হিসেবে নবাব ফয়জুন্নেসার নাম চিরস্মরণীয়। কলকাতার ঠাকুরবাড়ির ‘সখী সমিতি’র সদস্যা ছিলেন তিনি। 

তার সাহিত্য সাধনার খুব অল্প সময়ে তিনি বঙ্কিমচন্দ্রের সমসাময়িক লেখক। শুধু তাই নয় প্রথম মুসলিম গদ্য-পদ্যে লেখিকা ছিলেন। ১৮৭৬ খ্রীস্টাব্দে ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা গিরিশচন্দ্র মুদ্রণ যন্ত্র থেকে শ্রীমতি নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী রচিত সাহিত্য গ্রন্থ ‘রূপজালাল’ প্রকাশিত হয়।

ব্রিটিশ অপশাসনের ফলে মুসলিম সমাজে কুসংস্কারের বেড়াজালে অবরোধবাসিনী হয়েও ফয়জুন্নেসা সাহিত্য সাধনার মাধ্যমে একটি গৌরবময় স্থান অধিকার করে আছেন। রূপজালাল ব্যতীত ফয়জুন্নেসা কর্তৃক দু’খানি গ্রন্থের নাম পাওয়া যায়-সঙ্গীত লহরী ও সঙ্গীত সার প্রকাশিত হলেও তা এখন দুষ্প্রাপ্য। একথা বললে অত্যুক্তি হবে না সাহিত্য সাধনায় ফয়জুন্নেসার পথ ধরে বেগম রোকেয়ার আবির্ভাব হয়েছে। বাংলার নারীদের সাহিত্যে অবদানে নওয়াব ফয়জুন্নেসা সর্বাগ্রে।

মৃত্যুঃ

১৯০৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর এ মহীয়সীর জীবনাবসান ঘটে। তাকে তার প্রতিষ্ঠিত দশগুম্বুজ মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক দিয়ে সাথে থাকুন এবং ইউটিউব এ আমাদের ভিডিও গুলো দেখতে এখানে ক্লিক করুন

আরও পড়ুনঃ

এসেক্সুয়ালিটি কি এবং কেন হয় ? এটি কি কোনো রোগ ?

The beginning of the most popular search engine GOOGLE

Google! The most popular search engine in the world.

But how did Google’s journey begin? Who first came up with the idea of ​​launching something that would make people’s lives a thousand times easier!

Introduction:

Google was started by two young students at Stanford University in California, USA, who were doing their Ph.D. at the time. Their names are Larry Page and Sergey Brin. Google was created by these two people – now one of the most valuable companies in the world.

Tamara Manner, a computer scientist, was at Stanford at the same time as the two Google founders. This feature will be a part of my recollection of how his two friends Larry and Sergei came up with the idea of ​​a new type of search engine in the early days of the Internet.

Revolutionary change

In the mid-1990s. Two postgraduate students at Stanford came up with the idea – which later revolutionized the Internet world of human civilization.

Sergei Brin said, “We have always felt that such an initiative has business potential. But at that time our idea was to create a very good search engine and reach as many people as possible. ”

In the words of Larry Page, “Our mission was to streamline the world’s information, where people from all over the world could enter, benefiting everyone.” I thought it would be a great thing for the whole world. “

Larry laughed a lot. Besides, he was very intelligent and funny. Sergei, on the other hand, was a little serious. But they both deal with their confidence as they choose to embark on their play activities. Maybe it was a part of their personality and maybe that’s why Google has become such a different place.

Larry Page was born in Michigan. And Sergei Brin was born in Russia. However, both parents were academics and both came to Stanford to pursue a Ph.D. in computer science.

They first met in 1995. At the time, California’s Silicon Valley was a place of great potential. In Silicon Valley than the vibrancy of creation. Something new is being born everywhere. Everything is possible. One of the best things about the mid-1990s was that you could get a lot of great and attractive job offers at any one party.

Everywhere then start-ups – it means starting a new business, almost like an explosion. One-fourth of the graduate students at the time were start-ups. That was a wonderful place for a computer scientist.

Tamara worked in the same office with Larry Page and three others at Stanford. “When you meet Larry, you meet Sergei – because they’ve always been together,” he said. Even then, their friendship was not straightforward. ” Both later said that when they first met, they did not like each other at all.

New start:

In 1997, Page R. Brin launched a thesis project – How to Improve the Search for Different Pages on the Internet. Search engines say there was almost nothing then. Although it’s hard to imagine now, the process of finding something in the early days of the Internet was very chaotic and troublesome. If you want to find something then you have to rely on a hand-made index or index! Besides, there was no other way then.

“The world of the internet was so small back then that when someone clicked on my webpage, I kept logging in. What a thrill – someone clicked on my webpage!”

Page and Brin realize that when someone is looking for a webpage, it’s not just about being relevant, it’s about whether it’s valuable to previous users. For example, when you’re searching for ‘how to make a chocolate cake’, you’re not just looking for a page that has the word chocolate cake on it, you want that page – the page that other people have judged to be the best chocolate cake.

From this comes page ranking, algorithms – a new idea! Detailed information about this algorithm will be available in the second installment of Google Adopt!

This algorithm was used in a search engine called Backrub – it was launched by Page and Brin in 1998. Originally, this backbone was the predecessor of Google!

GOOGLE’S FIRST OFFICE!

The following year, Page and Brin left the Stamford University campus. They raised ১০ 1 million with the help of friends, family, and a few investors, and started their own company. Its office was in Menlo Park, California, in a friend’s garage. From that garage office, Google is one of the biggest companies in the world today!

by spelling mistake, ‘Gogole’ became ‘Google’!

Backrub was so popular at the time that Stanford’s internet often crashed, unable to cope with the pressure. At this point, its two founders, Larry and Sergei, thought the company needed a new name.

That’s why everyone sat in a ‘brainstorming’ meeting to hear the ideas of different people. The decision taken at that meeting has now become a legend in the age of information technology. That’s where the name Google was suggested. That name is written on the whiteboard of Stanford University.

The name was GOOGOL – a mathematical word – meaning 100 zeros on the back of 1. But there was a spelling mistake in writing that – unintentionally, or who knows – maybe on purpose! GOOGLE! But that misspelling (‘G Double and GLOE’ / GOOGLE) eventually survived.

The Google.com domain name was registered on September 15, 1997. Creation is a new chapter!

Introduction to GOOGLE – DOODLE!

Shortly afterward, the first Google Doodle came out – a change in the Google logo that reminds us of a particular person, event, or day. The first doodle was about a burning man – meaning Page and Brin went on a trip to the Burning Man festival in Nevada. Google has done many things that have not been done in the corporate world. Such as this Google doodle. The first doodle had a picture of a man on fire. Yet this Google Doodle changes its interface by remembering something special every day!

Google is now the most popular search engine in the world!

The search engine was very easy to use. All you have to do is type a word or two into their interface. The size of their company began to grow exponentially.

In August 2004, Google moved to its new headquarters in California. Whose name is Googleplex? That same year the company was listed on the stock market.

Google has become so much a part of our lives that it has become a noun and a verb. That misspelled ‘Google’ is now a noun! A verb! A brand!

Google is making hundreds of billions of dollars from advertising alone. They have been accused of tax evasion, monopoly power in the market, and censorship in China.

More Content:

Is it that true we lose brain cells? What makes it possible?

What is the easy way to know yourself?

What makes people smart and intelligent?

Make People Like You IMMEDIATELY with Psychological Tricks.

High IQ individuals lack social skills why do people say that?

This is Google’s first episode! In the second part, I will try to present all the details of the Google Algorithm.
Research References –
BBC News
Wikipedia

আলবার্ট আইনস্টাইনের এর যত প্রেম ও পরকীয়া

আলবার্ট আইনস্টাইনের এর প্রেম বা বৈবাহিক জীবন নিয়ে অতটা লুকোছাপা ছিল না। তাই হয়তো সহজেই বলে দেওয়া যায় মিলেভার সঙ্গে তাঁর রসায়নে চিড় ধরার কারণ।

 

বিখ্যাত এক সাহিত্যিক প্রায়ই বলেন, প্রেমের বিয়েতেও বিরক্তি আসে। একই ছাদের নিচে থাকতে থাকতে বৈবাহিক জীবনে বিরক্তি আসতে শুরু করে একসময়। আইনস্টাইনেরও বোধ হয় বৈজ্ঞানিক খ্যাতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিলেভার সঙ্গটা একঘেয়ে লাগতে শুরু করেছিল। নইলে পরিবারের অমতে প্রেমিকাকে বিয়ে করার পরও সেই সম্পর্কে ফাটল কেন ধরল? এর পেছনে কি শুধুই একঘেয়েমি কাজ করেছিল, নাকি এর নেপথ্যে ছিল ব্যক্তিত্বের সংঘাত কিংবা পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব?

 

আলবার্ট আইনস্টাইন স্কুলজীবনে কিছুটা একগুঁয়ে আর প্রচণ্ড মেধাবী ছিলেন। কিছু কিছু ব্যাপারে তাঁর জ্ঞান ছিল শিক্ষকদের চেয়েও খানিকটা এগিয়ে। এ ধরনের ছেলেমেয়েদের যা হয়, আইনস্টাইনেরও তা–ই হলো। অনেক শিক্ষকের বিরাগভাজন হলেন, তাই ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলেন না। শেষমেশ জুরিখে একটি কলেজে ভর্তি হলেন। সেখানেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় সুইস মেয়ে মিলেভা ম্যারিকের। মিলেভা ভীষণ সুন্দরী নন, কিন্তু মেধাবী। অনেকটা আইনস্টাইনের মতোই।

 

দ্রুতই তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব হলো, কিছুদিনের মধ্যেই বন্ধুত্ব গড়াল প্রেমে। সিদ্ধান্ত নিলেন বিয়ে করবেন। কিন্তু বাদ সাধেন আইনস্টাইনের মা। কারণ, মিলেভা দেখতে তেমন সুন্দরী নন, আইনস্টাইনের চেয়ে তাঁর বয়স সাড়ে তিন বছর বেশি, পায়ে খুঁত আছে, হাঁটেন খুঁড়িয়ে। ‘যারে দেখতে নারি, তার চলন বাঁকা’—মিলেভা সম্পর্কে আইনস্টাইনের মা পলিনের মনোভাব ছিল তেমন।

 

তিনি ভাবতেন, মেয়েটা একটা ডাইনি। জাদুটোনা করে তাঁর ছেলেকে বশ করেছে। অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিয়ে তিনি চিঠি লিখতেন মিলেভার মাকে। কিন্তু অনড় আইনস্টাইন, তাঁর জেদের কাছে ভেঙে পড়ে মায়ের দৃঢ় মনোবল। আইনস্টাইন গোপনে একদিন বিয়ে করেন মিলেভাকে। এই ঘরেই জন্ম হয় ছেলে আলবার্টের, আরও পরে হান্স আইনস্টাইনের।

গল্পটা খুব সাধারণ। গল্পের পেছনেও গল্প থাকে। বিয়ের আগেই আসলে আইনস্টাইনের এক কন্যাসন্তানের মা হয়েছিলেন মিলেভা। সেই শিশুর ভাগ্যে কী ঘটেছিল, তা জানা যায় না। তখনকার ইউরোপ ভীষণ রক্ষণশীল। অবিবাহিত মেয়ের মা হওয়াকে অত্যন্ত খারাপ চোখে দেখা হতো।

 

তাই আলবার্ট আইনস্টাইন বা মিলেভা কেউই তাঁদের বিবাহপূর্ব সন্তান সম্পর্কে ইতিহাসকে কিছু জানতে দেননি। কেউ কেউ মনে করেন, তাকে দত্তক দেওয়া হয়েছিল অন্য কারও কাছে। আবার কেউ মনে করেন, চার বছর বয়সেই মৃত্যু হয় আইনস্টাইনের প্রথম কন্যাসন্তানের। তবে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। শিশুটি যেন নীরবে জন্ম নিয়ে একেবারে হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছিল।

তারপর আরও দুই সন্তানের জনক-জননী হন আইনস্টাইন-মিলেভা জুটি। মিলেভা অনেক কষ্ট করেছেন। আইনস্টাইনের একটি পিএইচডি ডিগ্রি জোটেনি, চাকরির বাজারেও প্রত্যাখ্যাত। শেষে বন্ধুর সহযোগিতায় সুইজারল্যান্ডের বার্নের পেটেন্ট অফিসে সামান্য একটি চাকরি শুরু করেন।

সেই দুঃসময়ে মিলেভা যক্ষের ধনের মতো আগলে রেখেছেন সংসারের হাল। ওদিকে আইনস্টাইন অফিসের সময় চুরি করে দিস্তার পর দিস্তা সাদা কাগজ ভরিয়ে ফেলছেন গণিতের আঁকিবুঁকিতে। শেষ পর্যন্ত ১৯০৫ সালে এসে ঘুরে যায় আইনস্টাইনের জীবনের মোড়। সফল হয় অফিস থেকে চুরি করা সময়টুকুর পরিশ্রম। একে একে পাঁচ-পাঁচটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশ করেন তিনি।

 

এর মধ্যে একটি ছিল পরমাণুবিষয়ক, একটি আলোক তড়িৎক্রিয়ার ব্যাখ্যা এবং তৃতীয়টি বিখ্যাত থিওরি অব রিলেটিভিটি–বিষয়ক প্রবন্ধ। এরপরই নড়েচড়ে বসে বিজ্ঞানবিশ্ব। আইনস্টাইনকেও আর চাকরি নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় না। সুইজারল্যান্ডের জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক কাম অধ্যাপকের পদে চাকরি পান। পিএইচডিও জুটে যায় ইতিমধ্যে। তখন আইনস্টাইনের সংসার সোনায় সোহাগা হয়ে ওঠা উচিত ছিল। কিন্তু হলো কিনা উল্টো!

সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে—কথাটা বোধ হয় ঐতিহাসিক ভুল। শুধু নারী চাইলেই একটা সংসার ধরে রাখা সম্ভব নয়, যদি না তার পুরুষ জীবনসঙ্গী সেটি চায়। মিলেভা সাধ্যমতো সংসার সামলে রাখলে কী হবে, আলবার্ট আইনস্টাইনের বুকে তখন বাজছে নতুন প্রেমের সুর। ফিল্মস্টারের মতোই তাঁর তারকাখ্যাতি। যেখানেই যান একঝাঁক ললনার ভিড় লেগে থাকে তাঁকে ঘিরে। আইনস্টাইনও প্রশ্রয় দেন তাঁদের।

 

১৯১৩ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন এর  স্ত্রী আর ছেলেমেয়েদের নিয়ে ফিরে আসেন নিজের দেশে। বার্লিনে সদ্য প্রতিষ্ঠিত ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউটের পরিচালক পদে যোগ দেন। এরপরেই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন আইনস্টাইন। কারণ, খালাতো বোন এলসার প্রেমে নতুন করে মজেছেন তিনি। নতুন করে। কারণ, কৈশোরেও দুজনের মন দেওয়া–নেওয়া হয়ে গিয়েছিল।

 

কিন্তু এলসা আর আলবার্ট আইনস্টাইন এর  মাঝে ঘটে তৃতীয় একজনের আবির্ভাব। মেরি নামের ভয়াবহ এক সুন্দরীর মোহ আইনস্টাইনকে ভুলিয়ে দেয় এলসার প্রেম। ফলে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয় এলসা ও আলবার্ট আইনস্টাইনেরআইনস্টাইনের প্রেমপর্ব। অনেক দিন পরে, যখন আইনস্টাইনের ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে গেছে, এলসারও বিবাহযোগ্য দুটো মেয়ে আছে, তখন কিনা ফিরে এলেন আইনস্টাইন!

এলসার তত দিনে স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। আইনস্টাইনের খ্যাতিও পৌঁছে গেছে তাঁর কানে। এলসা তখন বার্লিনে বাস করেন। সুতরাং আইনস্টাইনের সঙ্গে তাঁর দেখা হতে থাকে নিয়মিত। পুরোনো প্রেমের রাগিণী বাজে দুজনের অন্তরে। বিষয়টা মিলেভার কান পর্যন্ত গড়াতে সময় লাগেনি।

 

স্বামী-স্ত্রীর যুদ্ধ বেধে যায় সংসারে। কিন্তু মিলেভা তাঁর মহাপরাক্রমশালী স্বামীর সঙ্গে পেরে ওঠেন না। আলবার্ট আইনস্টাইন তখন হিটলারের মতো আচরণ শুরু করেছেন বাড়িতে, আরোপ করেছেন নানা বিধিনিষেধ। আলবার্ট আইনস্টাইনের জামাকাপড় যেন পরিপাটি থাকে সব সময়, রিডিং রুম যেন সব সময় গোছানো থাকে এবং অন্য কেউ যেন তাঁর ডেস্ক, বই, খাতাপত্র ইত্যাদি স্পর্শ না করে, সেদিকে মিলেভাকে লক্ষ রাখতে হবে।

 

মনে হতে পারে, এ তো সামান্য ব্যাপার, আটপৌরে বাঙালি পরিবারে তো অহরহ এমনটা ঘটে। মনে রাখতে হবে, বিশ শতকের প্রথম ভাগ হলেও ঘটনাটা ঘটছে ইউরোপের সুইজারল্যান্ডে, নারী স্বাধীনতায় সে যুগেও তারা যোজন যোজন এগিয়ে। আরও কড়া শর্ত ছিল আলবার্ট আইনস্টাইনের, কখনো মিলেভা নিজে থেকে স্বামীর সঙ্গ চাইবেন না কিংবা নৈকট্য লাভের আশা করবেন না, কথা বলার সময় আইনস্টাইন যখনই চাইবেন মিলেভাকে চুপ করে যেতে হবে, কথার প্রতিবাদ বা তর্ক করা যাবে না।

ভেবে দেখুন, এভাবে কি কোনো সম্পর্ক টেকে?

এসবে ক্লান্ত মিলেভা, তার সঙ্গে ছিল বঞ্চনার ব্যথা। শিক্ষাজীবনে ছাত্র হিসেবে আইনস্টাইনের চেয়ে বরং মিলেভাই ভালো ছিলেন। আইনস্টাইনের গবেষণাতেও সহযোগিতা করেছেন। তাঁরও ইচ্ছা ছিল পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণা করার। আলবার্ট আইনস্টাইনের নাম যখন দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ছে, মিলেভা তখন রান্নাঘরের হাঁড়ি সামলাচ্ছেন, মুখ বুজে সহ্য করছেন স্বামীর অন্যায় আবদার।

ঘরের এই অবস্থায় ‘চাইলে তিনিও পারতেন আলবার্ট আইনস্টাইন এর  মতো বিখ্যাত হতে’—এই বিষয়টি মিলেভাকে ঈর্ষাকাতর করে তুলেছিল। দোষ বলতে তাঁর এটুকুই।

দিনে দিনে এলসার সঙ্গে প্রেমটা আরও খোলামেলা হয়ে ওঠে আইনস্টাইনের। মিলেভা এসব সহ্য করতে না পেরে দুই ছেলেকে নিয়ে চলে যান বার্লিন ছেড়ে জুরিখে। সেটা ১৯১৪ সাল। আলবার্ট আইনস্টাইনের তখন পোয়াবারো। বাসা নিলেন এলসাদের বাড়ির খুব কাছাকাছি। এতে অবশ্য তাঁর সুবিধাই হলো, খাওয়া ও দেখভালের দায়িত্ব সব তুলে নিলেন এলসা নিজের কাঁধে। তিনি খুব করে চাইছিলেন আইনস্টাইন ও মিলেভার সম্পর্ক যেন বিচ্ছেদের দিকে যায়।

এ সবকিছুর মধ্যেও কিন্তু থেমে নেই আলবার্ট আইনস্টাইনের গবেষণা। তিনি তখন মগ্ন জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটির রহস্য সন্ধানে। মগ্ন এলসার প্রেমেও। শুধু কি এলসা? শোনা যায়, আইনস্টাইন নাকি এলসার মেয়ের সঙ্গেও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। এলসার বড় মেয়ে আইলস তখন আইনস্টাইনের সেক্রেটারি। গোপনে তাঁর সঙ্গেও অভিসার চলে আইনস্টাইনের।

এ বিষয়টা জানতেন স্বয়ং এলসাও। তিনি মেয়েকে বাধা দেন। সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের জন্মের আগমুহূর্তে মা-মেয়ে-আইনস্টাইন-মিলেভা চতুষ্টয়ে মানব প্রবৃত্তির জটিলতম খেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছিল পৃথিবীতে।

শেষ পর্যন্ত আইলস তাঁর আরেক প্রেমিককে বিয়ে করে ফেলেন। এলসার পথ তখন পরিষ্কার। আইনস্টাইন তখন মিলেভাকে বিচ্ছেদের প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু তিনি রাজি নন। কারণ, তাঁর ধারণা, বিচ্ছেদ হয়ে গেলেই আইনস্টাইন তাঁর সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ দেওয়া বন্ধ করে দেবেন।

এছারাও আরও পড়ুনঃ আলবার্ট আইনস্টাইনের জীবন, কিছু রহস্য, ট্র্যাজেডি ও সাফল্য

এবংঃ

তথ্যসূত্র: ‘দ্য প্রাইভেট লাইফ অব আলবার্ট আইনস্টাইন’

আলবার্ট আইনস্টাইন এর জীবন, কিছু রহস্য, ট্র্যাজেডি ও সাফল্য

“ছেলের মানসিক সমস্যার কারণে খুব কঠিন সময় পার করেছেন আলবার্ট আইনস্টাইন,” বলেন জেভ রোজেনক্রান্স, আইনস্টাইন পেপার্স প্রজেক্টের একজন সম্পাদক এবং উপ-পরিচালক।

আলবার্ট আইনস্টাইনের কনিষ্ঠ সন্তানের নাম ছিল এডুয়ার্ড। তাকে আদর করে ডাকা হতো টেট।

এডুয়ার্ড (বামে) এবং হান্স আলবার্ট আইনস্টাইন শিশু বয়সে।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

এডুয়ার্ড (বামে) এবং হান্স আলবার্ট আইনস্টাইন, শিশু বয়সে।

শিশু কালেই তার স্বাস্থ্য নিয়ে পরিবারের ভেতরে উদ্বেগ ছিল। তবে তার মানসিক সমস্যার কথা জানা যায় আরো অনেক পরে। “তার জীবন ছিল অত্যন্ত করুণ,” বলেন রোজেনক্রান্স।

আলবার্ট আইনস্টাইনের প্রথম স্ত্রী এবং পদার্থবিজ্ঞানী মিলেভা মারিচের সংসারে ছিল তিনটি সন্তান। তাদের কন্যা লিসেরেল সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না, এবং তার জীবন অনেকটাই রহস্যাবৃত।

লিসেরেল ছিল তাদের সবচেয়ে বড় সন্তান। মেঝ সন্তান হান্স আলবার্ট তার জীবদ্দশাতেই বিজ্ঞানী হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছিলেন। তবে পিতার মতো বিখ্যাত তিনি কখনোই হতে পারেন নি।

“আমার পিতার ব্যতিক্রমী হয়ে ওঠার পেছনে কারণ হল তিনি খুব সহজে হাল ছাড়তেন না। কিছু কিছু সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে তিনি নিজেকে বিলিয়ে দিতেন। এমন কী কোন ভুল সমাধান হলেও। তিনি বারবার চেষ্টা করতেন। একবার না হলে আবার করতেন,” বলেন হান্স আলবার্ট।

“একমাত্র যে সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে তিনি হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন সেটা হচ্ছে আমি। তিনি আমাকে উপদেশ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু খুব শীঘ্রই তিনি বুঝতে পারেন যে আমি আসলে একজন একরোখা মানুষ এবং আমার পেছনে সময় দিলে সেটা হবে অপচয়,” বলেন তিনি।

প্রথম সন্তান, লিসেরেল

মিলেভা মারিচ ও আলবার্ট আইনস্টাইন বিবাহবন্ধনে জড়ানোর আগেই ১৯০২ সালে তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম হয়েছিল। এই কন্যা সন্তানের নাম ছিল লিসেরেল।

“দুই বছর বয়স হওয়ার পর তার কী হয়েছে সেবিষয়ে আমরা আসলেই কিছু জানি না,” বলেন রোজেনক্রান্স, “ইতিহাসে তিনি হারিয়ে গেছেন।”

আইনস্টাইন পেপার্স প্রজেক্ট তৈরিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন রোজেনক্রান্স। এই প্রকল্পের আওতায় নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিজ্ঞানীর শত শত দলিল ও কাগজপত্র সংগ্রহ করে সেগুলো অনুবাদ ও প্রকাশ করা হয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি এই প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে এবং তাতে সহযোগিতা করছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি এবং হিব্রু ইউনিভার্সিটি অফ জেরুসালেম।

আলবার্ট আইনস্টাইনের সঙ্গে তার স্ত্রী মিলেভা মারিচ। ছবিটি ১৯০৫ সালে তোলা।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

আলবার্ট আইনস্টাইনের সঙ্গে তার স্ত্রী মিলেভা মারিচ। ছবিটি ১৯০৫ সালে তোলা।

আইনস্টাইনের যেসব চিঠিপত্র এবং দলিলপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে সেগুলো থেকে তার মানবিক দিক সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়।

এসব চিঠিপত্র থেকেই জানা যায় লিসেরেলের কথা।

“তার স্বাস্থ্য কি ভাল? সে কি ঠিকমতো কান্নাকাটি করে? তার চোখগুলো কেমন? আমাদের মধ্যে কার সঙ্গে তার বেশি মিল? কে তাকে দুধ খাওয়ায়? সে কি ক্ষুধার্ত? তার মাথা নিশ্চয়ই পুরোপুরি ন্যাড়া। আমি তাকে এখনও চিনি না কিন্তু এর মধ্যেই তাকে আমি অনেক ভালবাসি,” এসব কথাই সুইজারল্যান্ড থেকে আইনস্টাইন লিখেছেন মিলেভাকে, যিনি সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য সার্বিয়াতে চলে গিয়েছিলেন।

কিন্তু শিশু জন্ম দেওয়ার জন্য তিনি কেন সুইজারল্যান্ড ছেড়ে যান?

“আইনস্টাইনের মা মিলেভার সঙ্গে তার সম্পর্ককে একেবারেই মেনে নিতে পারেন নি,” বলেন হানচ গুটফ্রয়েন্ড, আইনস্টাইনের ওপর সম্প্রতি একটি বই লিখেছেন তিনি।

গুটফ্রয়েন্ড বলেন, আইনস্টাইনের মা মনে করেছিলেন তার সন্তান ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে ফেলছে। “তিনি এমন হুমকিও দিয়েছিলেন যে মিলেভা যদি অন্তঃসত্ত্বা হন সেটা হবে একটা বিপর্যয়কর ঘটনা। সেসময় বিয়ের আগে সন্তান নেওয়া ছিল অনেক বড় কেলেঙ্কারি।”

ভায়োলিন বাজাচ্ছেন আইনস্টাইন।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

সন্তানদের জন্য ভায়োলিন বাজাতেন আইনস্টাইন।

“তোমার জন্য আমার প্রেম”

কিন্তু বাস্তব ঘটনা হচ্ছে এই দুজনের মধ্যে প্রেম ছিল অনেক গভীর, বলেন গুটফ্রয়েন্ড। ধারণা করা হয় আইনস্টাইনের বয়স যখন ১৯ এবং মিলেভার বয়স ২৩ তখন তাদের মধ্যে এই সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল।

এই দুজন পদার্থবিদ জুরিখ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে পড়াশোনা করতেন। সেসময় সেখানে মিলেভা ছিলেন একমাত্র নারী শিক্ষার্থী। এছাড়াও তিনি ছিলেন দ্বিতীয় নারী যিনি গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা শেষ করেছেন।

ওয়াল্টার আইজাকসন আইনস্টাইনের ওপর একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। নাম আইনস্টাইন: তার জীবন ও মহাবিশ্ব। তিনি বলেন, “আইনস্টাইনের চিঠিপত্র থেকে মিলেভার প্রতি তার প্রেম ভালবাসা সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। আমরা এও জানতে পারি যে আইনস্টাইনের মা বউ হিসেবে মিলেভাকে মেনে নিতে পারেন নি।”

একটি চিঠিতে লেখা: “আমার পিতামাতা এমনভাবে কাঁদতেন যেন আমি মারা গেছি। তারা বারবার একই অনুযোগ করতেন যে তোমাকে ভালবেসে আমি নিজের জন্য লজ্জা বয়ে এনেছি। তারা মনে করেন তোমার স্বাস্থ্য ভাল নয়।”

কিন্তু আইনস্টাইন তার হৃদয়ের কথাই শুনেছিলেন। মিলেভা যখন গর্ভধারণ করেছেন তখন তিনি তাকে একটি চিঠিতে লিখে একজন ভাল স্বামী হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

আলবার্ট আইনস্টাইন তার ছেলে হান্স আলবার্টের সঙ্গে ১৯৩৬ সালে।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

আলবার্ট আইনস্টাইন তার ছেলে হান্স আলবার্টের সঙ্গে ১৯৩৬ সালে।

আইনস্টাইন লিখেছেন: “আমাদের জন্য যেটা একমাত্র সমস্যা হয়ে থাকবে তা হলো লিসেরেলকে আমাদের সঙ্গে রাখা। আমি তাকে ত্যাগ করতে চাই না।”

আইনস্টাইন জানতেন তার সমাজে একজন “অবৈধ শিশুকে” সঙ্গে রাখা কতখানি কঠিন। এবং তার জন্য তো এটা আরো অনেক কঠিন ছিল কারণ তিনি সমাজে একজন সম্মানিত ব্যক্তিতে পরিণত হচ্ছিলেন।

দীর্ঘ নীরবতা

মনে করা হয় যে আইনস্টাইনের সঙ্গে লিসেরেলের কখনো সাক্ষাৎ হয়নি। মিলেভার যখন সুইজারল্যান্ডে ফিরে আসার সময় হয়, লিসেরেলকে তিনি সার্বিয়াতে তার আত্মীয় স্বজনের কাছে রেখে আসেন।

আইজাকসন ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে মিলেভার একজন ঘনিষ্ঠ বান্ধবী হয়তো লিসেরেলকে দেখাশোনা করতো কিন্তু এই তথ্যও খুব একটা নিশ্চিত নয়।

“তাদের প্রেমপত্রগুলোতে যা কিছু লেখা হয়েছে সেগুলো থেকেই আমরা তাদের কন্যা সম্পর্কে জানতে পারি,” বলেন গুটফ্রয়েন্ড, “কিন্তু একটা সময় পর তার কথা আর কখনো উল্লেখ করা হয়নি।”

“অনেক ইতিহাসবিদ ও সাংবাদিক সার্বিয়াতে গিয়ে তার বিষয়ে জানার চেষ্টা করেছেন, দলিলপত্র, রেকর্ড, আর্কাইভ- সব জায়গাতে তার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছেন কিন্তু তারা তেমন একটা সফল হননি,” বলেন রোজেনক্রান্স।

“তার কথা সবশেষ উল্লেখ করা হয় যখন তার বয়স দুই বছর। সেসময় তার জ্বর হয়েছিল। কিন্তু আমরা জানি না এর পরে সে বেঁচে ছিল কীনা,” বলেন তিনি।

এর পর তাকে নিয়ে নানা ধরনের জল্পনা কল্পনা তৈরি হয়েছে: “হয়তো তাকে দত্তক দেওয়া হয়েছে, অথবা সে হয়তো মারা গেছে। আমরা ঠিক জানি না,” বলেন রোজেনক্রান্স।

ধারণা করা হয় যে আইনস্টাইন, যিনি ১৯৫৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন, তিনি তার কন্যা সম্পর্কে কাউকে কখনও কিছু বলেন নি।

আইনস্টাইন পেপার্স প্রজেক্ট জানতে পেরেছে লিসারেল ১৯৮৬ সালেও বেঁচে ছিলেন। এসময় মিলেভার সাথে যেসব যোগাযোগ হয়েছে তার কিছু বিষয়ে এই প্রজেক্টে জানতে পেরেছে।

বই পড়ছেন আইনস্টাইন।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

আইনস্টাইনের বয়স যখন ২৬।

নিজের বাড়ি

আইনস্টাইন ১৯০৩ সালে বের্ন শহরে একটি ভাল চাকরি পান, মিলেভা ফিরে আসেন সার্বিয়া থেকে, এবং এর পর তারা বিয়ে করেন।

পরের বছর তাদের দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয়। এই পুত্র সন্তানের নাম ছিল হান্স আলবার্ট। তাদের তৃতীয় ও শেষ সন্তান ছিল এডুয়ার্ড, তার জন্ম ১৯১০ সালে। পরিবারটি জুরিখে চলে যাওয়ার পর তার জন্ম।

“আমার মা যখন বাড়িতে ব্যস্ত থাকতেন তখন আমার পিতা তার কাজ রেখে দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমাদের দেখাশোনা করতেন। আমাদেরকে তার হাঁটুর ওপর বসিয়ে তিনি দোল খাওয়াতেন। আমার মনে আছে তিনি আমাদের গল্প শোনাতেন এবং প্রায়শই ভায়োলিন বাজিয়ে আমাদের শান্ত রাখতে চেষ্টা করতেন,” এভাবেই হান্স আলবার্ট উল্লেখ করেছেন বলে জানান আইজাকসন।

এডুয়ার্ড: শারীরিক ও মানসিক সমস্যা

এডুয়ার্ডের শৈশবের শুরুর দিকে তার স্বাস্থ্য খারাপ ছিল, প্রায়শই সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়তো এবং দীর্ঘ সময় বিছানায় পড়ে থাকতো।

একবার, ১৯১৭ সালে, যখন তার ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছিল, আইনস্টাইন তার এক বন্ধুকে লিখেছিলেন: “আমার ছোট শিশুর অবস্থা আমাকে বেশ বিষণ্ণ করে রাখে।”

এসব সত্ত্বেও “সে একজন দারুণ ছাত্র ছিল। শিল্পকলার ব্যাপারে তার বিশেষ আগ্রহ। সে কবিতা লিখে এবং পিয়ানো বাজায়,” আইনস্টাইনের ওপর এক গ্রন্থ ‘এন আইনস্টাইন এনসাইক্লোপিডিয়া’তে একথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এডুয়ার্ড তার পিতার সঙ্গে সঙ্গীত ও দর্শন বিষয়ে আলোচনা করতেন এবং আইনস্টাইন একবার বলেছিলেন যে তার “ছেলে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করছে।”

ভালবাসার সমাপ্তি

আইনস্টাইন যতই তার বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে ডুবে যেতে লাগলেন ততই মিলেভার সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটতে লাগল। এসময় তার এক কাজিন এলসার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয়।

পরিবারটি ১৯১৪ সাল পর্যন্ত বার্লিনে বসবাস করত। কিন্তু মিলেভার প্রতি আইনস্টাইনের অবজ্ঞামূলক আচরণের কারণে তাদের বৈবাহিক সম্পর্কে তিক্ততা আরো বৃদ্ধি পায়। এবং এক পর্যায়ে মিলেভা তার সন্তানদের নিয়ে সুইজারল্যান্ডে ফিরে যান।

তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে ১৯১৯ সালে কিন্তু সন্তানদের কাছ থেকে দূরে থাকা আইনস্টাইনের জন্য খুব কষ্টকর ছিল, বলেন গুটফ্রয়েন্ড, ফলে তিনি তার দুই ছেলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতেন।

“তিনি খুব স্নেহময় পিতা ছিলেন, ” বলেন রোজেনক্রান্স।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যখনই পরিস্থিতি তৈরি হতো তিনি সন্তানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন, ছুটিতে বেড়াতে নিয়ে যেতেন এবং “যখন তারা বড় হয়ে গেল, তাদেরকে তিনি বার্লিনে আমন্ত্রণ জানাতেন একসঙ্গে সময় কাটানোর জন্য।”

“তাদের দুজনের সঙ্গেই আইনস্টাইনের ভাল যোগাযোগ ছিল, বিশেষ করে ছোট ছেলের সঙ্গে, তার কিশোর বয়সে।”

বাগানে হাঁটছেন আইনস্টাইন।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

আইনস্টাইন তার কন্যার কথা গোপন রেখে গেছেন।

তিনি বলেন, এডুয়ার্ডের সঙ্গে তার ঘন ঘন যোগাযোগ হতো এবং সেটা ছিল বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যায়ের। এমনকি তারা একে অপরের সমালোচনাও করতেন।

“এডুয়ার্ড আইনস্টাইনকে যা কিছুই পাঠাত সেটা তিনি খুব পছন্দ করতেন,” সেটা যে শুধু তার লেখার উপহার সেজন্য নয়, তার চিন্তার গভীরতার কারণেও।

আইনস্টাইন ১৯৩০ সালে তাকে লিখেছিলেন, “জীবন হচ্ছে একটা সাইকেল চালানোর মতো। ভারসাম্য রাখতে হলে সেটাকে চালাতে হবে।”

বড় ছেলে হান্স আলবার্টের সঙ্গে আইনস্টাইনের সম্পর্ক খুব বেশি গভীর ছিল না। হান্স ছিল অনেকটা মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষ, বলেন রোজেনক্রান্স।

“বিজ্ঞানের প্র্যাকটিক্যাল কাজ, উদ্ভাবন, কারিগরি – এসব বিষয়ে তার ঝোঁক ছিল,” তার পিতার সঙ্গে খেলাধুলা থেকে এটা বোঝা যায়।

এর কয়েক বছর পর আইনস্টাইন তাকে যেসব চিঠি লিখতেন সেগুলোতে তিনি যে শুধু তার তত্ত্বের কথাই লিখতেন তা নয়, সেগুলো তিনি প্রমাণ করারও চেষ্টা করতেন। একই সঙ্গে কিভাবে একটি চাকরি সংগ্রহ করা যায় সেবিষয়েও তিনি পরামর্শ দিতেন।

রোগ নির্ণয়

এডুয়ার্ড আইনস্টাইন স্বপ্ন দেখতেন যে তিনি একজন মনোবিজ্ঞানী হবেন এবং সিগমুন্ড ফ্রয়েডর তত্ত্বের ব্যাপারে তার প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল।

তিনি যখন মেডিসিন বিষয়ে পড়াশোনা করতেন, ১৯৩২ সালে, তাকে সুইজারল্যান্ডের একটি মানসিক চিকিৎসার ক্লিনিকে ভর্তি করাতে হয়েছিল। ১৯৩৩ সালে, তার বয়স যখন ২২ তখন ধরা পড়ে যে তিনি মানসিক রোগ স্কিটসোফ্রিনিয়াতে আক্রান্ত।

“এতে আইনস্টাইন প্রচণ্ড কষ্ট পান,” বলেন গুটফ্রয়েন্ড।

“আমার দুটো ছেলের মধ্যে সবচেয়ে পরিমার্জিত, যাকে আমার নিজের চরিত্রের মতো বলে মনে হয়, সে অনিরাময়যোগ্য এক মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েছে,” আইনস্টাইনের লেখা একটি চিঠিতে একথা উল্লেখ করা হয়েছে।

জার্মানিতে নাৎসি বাহিনীর উত্থান ঘটে ১৯৩৩ সালে। তখন তিনি জার্মানি ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যেতে বাধ্য হন।

“জার্মানি ছেড়ে যাওয়ার সামান্য আগে আইনস্টাইন এডুয়ার্ডের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সম্ভবত সেটাই ছিল তাদের শেষ দেখা,” একথা উল্লেখ করা হয়েছে এক আইনস্টাইন এনসাইক্লোপিডিয়াতে, “এর পর পিতা ও পুত্রের আর কখনো দেখা হয়নি।”

দুঃখজনক সমাপ্তি

মূলত মিলেভা-ই এডুয়ার্ডকে দেখাশোনা করতেন, কিন্তু যখন তার অবস্থার আরো অবনতি ঘটতে থাকে- অথবা যখন মিলেভা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন- তখন তাকে একটি মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে থাকতে হয়েছিল।

মিলেভা মারা যান ১৯৪৮ সালে। এর পর এডুয়ার্ডকে দেখাশোনা করার জন্য তার একজন আইনগত অভিভাবক নিয়োগ করতে হয়েছিল যার খরচ দিতেন আইনস্টাইন।

“আমার মনে হয় না সেসময় পিতা ও পুত্রের মধ্যে কোনো ধরনের যোগাযোগ হয়েছে,” বলেন রোজেনক্রান্স।

আইজাকসনের মতে, এডুয়ার্ডের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের যেতে অনুমতি দেওয়া হয়নি।

জীবনের শেষ দিনগুলো তিনি একটি ক্লিনিকে কাটিয়েছেন এবং সেখানেই তিনি ১৯৬৫ সালে ৫৫ বছর বয়সে মারা যান।

দ্বিতীয় স্ত্রী এসলার সঙ্গে আইনস্টাইন।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

দ্বিতীয় স্ত্রী এসলার সঙ্গে আইনস্টাইন।

হান্স আলবার্ট

আইনস্টাইনের দ্বিতীয় সন্তান হান্স আলবার্ট জুরিখে সুইস ফেডারেল ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বিষয়ে পড়ালেখা করেছেন।

“আমার আলবার্ট একজন সক্ষম ও দৃঢ় চরিত্রের ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছে,” ১৯২৪ সালে একথা লিখেছেন গর্বিত আইনস্টাইন।

হান্স আলবার্ট ১৯২৬ সালে স্নাতক ডিগ্রি এবং ১৯৩৬ সালের মধ্যে তিনি ডক্টর অব টেকনিক্যাল সায়েন্সেস উপাধি অর্জন করেন।

পিতার পরামর্শে ১৯৩৮ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান এবং সেখানে গিয়ে তার পড়াশোনা চালিয়ে যান।

তার পড়াশোনার বিষয় ছিল নদী এবং সেখানে পলিমাটির চলাচল।

নদীর পানি কিভাবে পলিমাটি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যায় সে বিষয়ে আমরা বর্তমানে যা কিছু জানি তার ভিত্তি তৈরি করেছে এই হান্স আলবার্টের গবেষণা।

তার অবদানের প্রতি স্বীকৃতি জানাতে আমেরিকান সোসাইটি অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স ১৯৮৮ সালে হান্স আলবার্ট আইনস্টাইন পুরষ্কার ঘোষণা করে।

হান্স বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন।

“তার মধ্যে কিছু বিষয়ের সমন্বয় ঘটেছিল যা খুবই বিরল। বিজ্ঞানের গবেষণায় তিনি খুব দক্ষ ছিলেন, একই সঙ্গে ছিলেন একজন প্রকৌশলী এবং একজন চমৎকার শিক্ষক।”

আলবার্ট আইনস্টাইন ১৯৫৪ সালে লেখা এক চিঠিতে তার এ ছেলের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছেন, “সে আমার চরিত্রের প্রধান দিকগুলো পেয়েছে: লক্ষ্য অর্জনে সে নিজেকে পুরোপুরি নিয়োগ করতে পারে, একজন মানুষের পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব।”

মতবিরোধ

সন্তানদের সঙ্গে আলবার্ট আইনস্টাইনের সম্পর্কে উত্থান পতন চোখে পড়ার মতো: কোন চিঠিতে তিনি খুব স্নেহপ্রবণ আবার কোন চিঠিতে তাকে খুব ঠাণ্ডা এবং জাজমেন্টাল বলে মনে হয়েছে।

“অন্যান্য পরিবারের মতোই, তাদের যেমন কঠিন সময় ছিল তেমনি ছিল ভাল সময়ও,” বলেন রোজেনক্রান্স, “হান্স আলবার্টের সঙ্গে তার বেশ কয়েকবার সংঘাত হয়েছিল।”

কিশোর বয়সে হান্স আলবার্ট একবার তার পিতাকে বলেছিলেন যে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিন্তু আলবার্ট আইনস্টাইন এতে খুশি ছিলেন না।

পরের কয়েক বছরে এই বিরোধ আরো বড়তে থাকে: “প্রথমত হান্স আলবার্ট যাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন আইনস্টাইন তাকে পছন্দ করেন নি।”

এলোমেলো চুলে আইনস্টাইনের অতিপরিচিত এক ছবি।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

এলোমেলো চুলে আইনস্টাইনের অতিপরিচিত এক ছবি।

এই ঘটনায় মিলেভা আইনস্টাইনের সঙ্গে একমত হয়েছিলেন কিন্তু হান্স আলবার্ট তাদের দুজনের মতামত উপেক্ষা করে ১৯২৭ সালে ভাষাবিজ্ঞানী ফ্রিয়েডা নেখ্টকে বিয়ে করেন।

পরে আইনস্টাইন সন্তানের সিদ্ধান্ত মেনে নেন এবং ফ্রিয়েডাকে পুত্রবধূ হিসেবে গ্রহণ করেন। তাদের ঘরে তিনটি সন্তানের জন্ম হয়।

গুটফ্রয়েন্ডের মতে তারা দুজন একে অপরের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করলেও তারা পৃথক জীবন যাপন করেছেন: হান্স আলবার্ট থাকতেন পশ্চিম উপকূলে আর আইনস্টাইন ছিলেন পশ্চিম উপকূলের প্রিন্সটনে।

“এছাড়াও, আইনস্টাইন এর মধ্যেই তার দ্বিতীয় সংসার শুরু করে দিয়েছেন (তার কাজিন এলসা এবং এলসার আগের ঘরের দুই কন্যাসহ), বলেন তিনি।

ফ্রিয়েডার মৃত্যুর পর হান্স আলবার্ট বায়োকেমিস্ট এলিজাবেথ রবোজকে বিয়ে করেন, যার সঙ্গে তিনি তার বাকি জীবন কাটিয়েছেন। ১৯৭৩ সালে তিনি মারা যান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। তার বয়স হয়েছিল ৬৯।

আইনস্টাইন একবার মিলেভাকে বলেছিলেন “তার জীবনের অন্যতম ভাল একটি দিক হচ্ছে তার দুই সন্তান, যারা তার মৃত্যুর পরেও আইনস্টাইনের জীবন বহন করবে,” বলেন আইজাকসন।

কিন্তু বিখ্যাত এবং প্রতিভাবান ব্যক্তির সন্তান হিসেবে তাদের জীবন সহজ ছিল না। এডুয়ার্ড নিজেই লিখেছেন: “কখনও কখনও এরকম একজন গুরুত্বপূর্ণ পিতা থাকার সমস্যা আছে। কারণ তার নিজেকে খুব অগুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়।”

আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্ব প্রকাশিত হওয়ার এক বছর আগে হান্স আলবার্টের জন্ম হয়েছিল।

আলবার্ট আইনস্টাইন তার পরবর্তী জীবনে স্বীকার করেছেন মিলেভা কতো ভালভাবে তার সন্তানদের বড় করেছেন।

আমি মনে করি না যে আইনস্টাইন নিজেকে খুব ভাল একজন স্বামী হিসেবে মনে করতেন। আমার মনে হয় তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে স্বামীর চেয়ে পিতা হিসেবেই তিনি ভাল ভূমিকা পালন করেছেন,” বলেন রোজেনক্রান্স।

সূত্রঃ BBC

Like Our Facebook Page and See Our Videos on YouTube

 

ধন্যবাদ 

আলবার্ট আইনস্টাইন এর জীবনে কিছু মজার ঘটনা

বিশ্বের অন্যতম বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন জন্মেছিলেন ১৮৭৯ সালের ১৪ মার্চ। মাত্র কয়েকদিন আগেই বিজ্ঞানীরা তাঁর আপেক্ষিকতা তত্ত্বকে নির্ভুল হিসেবে মেনে নিয়েছেন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহাকর্ষ তরঙ্গের ওপর ভর করেই চলছে মহাবিশ্ব। পৃথিবীর ঘূর্ণন, গ্রহ-নক্ষত্রের গতি সব কিছুই ঘটছে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের কারণে। বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী আইনস্টাইন তাঁর আপেক্ষিকতা তত্ত্বেই এই তরঙ্গ সম্পর্কে ধারণা দিয়েছিলেন। মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্ত করার মাধ্যমে আইনস্টাইনের তত্ত্ব নির্ভুল প্রমাণিত হয়।

তবে এত কঠিন কঠিন তত্ত্ব যে বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেছেন, তাঁর জীবনে কিন্তু মজার ঘটনা কম নেই। সেসব মজার ঘটনার কয়েকটি দেওয়া হলো নিচে।

কথা বলা:

আইনস্টাইন সম্পর্কে বলা হয়, তিনি কথা বলতে শুরু করেন দেরিতে; চার বছর বয়সে। আর পড়তে শেখেন সাত বছর বয়সে। চার বছর পর্যন্ত যখন তিনি কথা বলছিলেন না, তখন তাঁর মা-বাবা বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। একদিন হঠাত্‍ খাবার টেবিলে মূক আইনস্টাইন বলে উঠলেন, ‘স্যুপটা খুবই গরম’!

তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘এতদিন কেন কথা বলোনি?’

‘এতদিন তো সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল’, আইনস্টাইন তাঁর জীবনের দ্বিতীয় বাক্যটি বললেন।

কোথায় যাচ্ছিলাম:

বিজ্ঞানীরা বরাবরই কিছুটা ভুলোমনা হয়ে থাকেন, তবে এদিক থেকে নোবেলজয়ী বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বোধ হয় একটু বেশিই এগিয়ে ছিলেন! একবার তিনি ট্রেনে চড়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। চেকার এসে টিকেট দেখতে চাইলেন। কিন্তু আইনস্টাইন কিছুতেই টিকেট খুঁজে পাচ্ছিলেন না। শুধু বিড়বিড় করছেন, ‘কোথায় যে রাখলাম টিকেটটা!’

চেকার বললেন, ‘স্যার, আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি। আপনি নিশ্চয়ই টিকেট কেটেই উঠেছেন। আপনাকে টিকেট দেখাতে হবে না।’

আইনস্টাইন চিন্তিত মুখে বললেন, ‘না না! ওটা তো খুঁজে পেতেই হবে! না পেলে জানব কী করে, আমি কোথায় যাচ্ছিলাম!’

জ্যোতির্বিদ;

আলবার্ট আইনস্টাইন একবার বিজ্ঞানীদের সম্মেলনে যোগ দিতে যান। সেখানে একজন বিশিষ্ট জ্যোতির্বিদ মন্তব্য করেন, ‘অসীম বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে একজন জ্যোতির্বিদ গুরুত্বহীন একটি বিন্দু ছাড়া কিছুই নন।’

জবাবে আইনস্টাইন বলেন, ‘তবে আমার ব্যাপারটি হচ্ছে কি, কোনো মানুষকে যদি আমি এ রকম গুরুত্বহীন বিন্দু মনে করি, দেখি যে ওই ব্যক্তি একজন জ্যোতির্বিদ।’

খালি চোখে:

আইনস্টাইন একবার রেলগাড়ির ডাইনিংয়ে রাতের খাবার খেতে এসে দেখলেন, চশমা ফেলে এসেছেন। খালি চোখে মেন্যুও পড়া যাচ্ছে না। তিনি ওয়েট্রেসকে ডেকে বললেন, দয়া করে এটা পড়ে দাও।

ওয়েট্রেস তাঁর দিকে সহানুভূতির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ‘দুঃখিত স্যার, আমার পড়াশোনার দৌড়ও আপনার মতোই।’

টিকেট:

বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীর টিকেট বিড়ম্বনার আরেক গল্প এটি। দিন কয়েকের জন্য প্রথমবারের মতো এক বড় শহরে বেড়াতে গিয়েছেন আইনস্টাইন। এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করে বাসে চেপে হোটেলে ফিরছেন।

বাসের কন্ডাক্টর টিকেট চাইলে তিনি খুবই বিব্রতবোধ করলেন। এ পকেট সে পকেট হাতড়ে কোথাও টিকেট পেলেন না। কন্ডাক্টর তাঁকে বিব্রত হতে দেখে বললেন, ‘ঠিক আছে, আপনাকে আর ব্যস্ত হতে হবে না। টিকেটটা কোথাও পড়ে গেছে হয়তো।’

এ কথা শুনে আলবার্ট আইনস্টাইন বিচলিত হয়ে বললেন, ‘আরে না, বলছ কি তুমি! টিকেট না পেলে আমি হোটেলে ফিরব কী করে? টিকেটের উল্টো পাশে হোটেলের নাম-ঠিকানা লেখা ছিল যে!’

মনের ভাব:

এক বক্তৃতা সভায় আলবার্ট আইনস্টাইনকে একনজর দেখানোর জন্য বাবা তাঁর ছেলেশিশুকে উঁচু করে ধরলেন আইনস্টাইনের সামনে। শিশুটি তখন তারস্বরে কাঁদছে। বৃদ্ধ আইনস্টাইন শিশুটির গাল টিপে দিয়ে বললেন, ‘এত বছর বয়সের মধ্যে একমাত্র তুমিই অকপটে আমার সম্পর্কে মনের ভাব প্রকাশ করলে। ধন্যবাদ।’

পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র:

এক পার্টিতে আলবার্ট আইনস্টাইনকে চিনতে না পেরে এক তরুণী জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি কী করেন?’ আইনস্টাইন বললেন, ‘আমি পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র।’ তরুণী অবাক, ‘কী! এই বয়সে আপনি এখনো ছাত্র? আমি তো গত বছর পড়াশোনার পাট চুকিয়ে ফেলেছি।’

আপেক্ষিক তত্ত্বের বিরোধিতা:

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আইনস্টাইন যখন বিজ্ঞান ছেড়ে প্রায় নির্বাসিত জীবন-যাপন করছিলেন, তখন হিটলারপন্থী ১০০ জন অধ্যাপক একটি বই প্রকাশ করেন। যার বিষয়বস্তু ছিল আপেক্ষিক তত্ত্বের বিরোধিতা। আইনস্টাইন ব্যাপারটি জেনে মন্তব্য করেন, ‘আমার তত্ত্ব ভুল প্রমাণ করার জন্য একজন অধ্যাপকই তো যথেষ্ট ছিল।’

ফ্যাশন:

আলবার্ট আইনস্টাইন এর  ‘থিওরি অব রিলেটিভিটি’ তত্ত্ব আবিষ্কারের পর সেই সময়ে অল্প কয়েকজন বিজ্ঞানী শুধু বুঝতে পেরেছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই আবিষ্কারের ফলেই তাঁর জনপ্রিয়তা সর্বস্তরে পৌঁছে যায়। এক চুরুট কোম্পানি তো তাদের চুরুটের নামই ‘রিলেটিভিটি চুরুট’ রেখে দেয়। সে সময় এক সাংবাদিক আইনস্টাইনকে প্রশ্ন করলেন, ‘আচ্ছা বলুন তো, থিওরি অব রিলেটিভিটি নিয়ে চারদিকে এত আলোচনা হচ্ছে কেন?’

আইনস্টাইন মৃদু হেসে উত্তর দিলেন, ‘মানুষ ফ্যাশন পছন্দ করে। আর এ বছরের ফ্যাশন হলো থিওরি অব রিলেটিভিটি। তাই এ নিয়ে এত আলোচনা।’

প্রশ্নোত্তর:

একবার আলবার্ট আইনস্টাইন এর এক ছাত্র তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসে অনুযোগের সুরে বলল, ‘স্যার, এবারের পরীক্ষার প্রশ্নগুলো প্রায় সবই গতবার পরীক্ষায় এসেছিল। হুবহু একই প্রশ্ন। তা হতে পারে-আইনস্টাইন বললেন, কিন্তু খাতা দেখতে গিয়ে লক্ষ করলাম উত্তরগুলো সব আগের বছরের চেয়ে আলাদা।

টেলিফোন নম্বর:

আলবার্ট আইনস্টাইন এর এক সহকর্মী একদিন তাঁর টেলিফোন নম্বরটা চাইলেন। আইনস্টাইন তখন টেলিফোন গাইডে নিজের নম্বর খুঁজতে শুরু করেন। এদিকে সময় নষ্ট হচ্ছে দেখে সহকর্মী বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘তুমি তোমার নিজের নম্বরটাও মনে রাখতে পারো না?’ এ কথায় আইনস্টাইন উল্টো যুক্তি দেখিয়ে বললেন, ‘যে জিনিসটা টেলিফোন গাইডে লেখা আছে, সেটা আমি খামোখা মুখস্থ করতে যাব কেন?’

রও পড়ুন: আলবার্ট আইনস্টাইনের জীবন, কিছু রহস্য, ট্র্যাজেডি ও সাফল্য

 

বিয়ে:

বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের মেধার তুলনায় তাঁর চেহারা ছিল নিতান্তই সাদামাটা। তারপরও একবার এক সুন্দরী অভিনেত্রী প্রস্তাব দেন, ‘চলুন আমরা বিয়ে করে ফেলি। তাহলে আমাদের সন্তানের চেহারা হবে আমার মতো সুন্দর আর মেধা হবে আপনার মতো প্রখর।’

আইনস্টাইনের নির্বিকার উত্তর, ‘কিন্তু যদি ঠিক এর উল্টোটা ঘটে, তবে কী হবে?’

Like our Facebook Page and See our Videos on YouTube