বাংলাদেশের ইতিহাসে ৫ আগস্ট এখন শুধুমাত্র একটি তারিখ নয়, এটি হয়ে উঠেছে একটি জাতীয় স্মৃতির প্রতীক — “জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস”। ২০২৫ সাল থেকে ৫ আগস্টকে সরকারিভাবে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করে সরকারি ছুটির আওতায় আনা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি ছুটির বিষয় নয়, বরং একটি ঐতিহাসিক আন্দোলনের স্বীকৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনাকে সম্মান জানানোর প্রতীক।
৫ আগস্ট কি সরকারি ছুটি?
হ্যাঁ, ৫ আগস্ট এখন থেকে প্রতি বছর ‘ক’ শ্রেণির জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করা হবে এবং সারাদেশে সরকারি ছুটি থাকবে। এ ছুটির আওতায় সরকারি অফিস, আদালত, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজসহ অধিকাংশ দপ্তর বন্ধ থাকবে।
কেন ৫ আগস্টকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে?
২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে এক নজিরবিহীন গণআন্দোলনের সূচনা হয়। শুরুটা হয়েছিল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দিয়ে — তারা প্রথমে রাজপথে নামে শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতি, চাকরি বাণিজ্য, বিচারহীনতা ও শাসনব্যবস্থার দুর্বলতার বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ ধীরে ধীরে ফেটে পড়ে।
এই গণআন্দোলন ৫ আগস্টে এসে চূড়ান্ত রূপ নেয়। সেদিন ছাত্র, তরুণ, শ্রমজীবী এবং সাধারণ মানুষ রাজপথে একত্রিত হয়ে একসঙ্গে দাবি তোলে একটি গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক পরিবর্তনের। সেই দিনে দেশের রাজধানী ও অন্যান্য বড় শহরে ব্যাপক জনসমাগম, প্রতিবাদ মিছিল এবং প্রতিরোধ গড়ে ওঠে।
সেদিনের আন্দোলনে বহু মানুষ আহত হন, অনেকে নিহতও হন — ফলে ৫ আগস্ট ইতিহাসে রচিত হয় “গণ-অভ্যুত্থানের বিজয় দিবস” হিসেবে। সরকারও সেই বাস্তবতাকে স্বীকার করে, পরবর্তীতে প্রজ্ঞাপন জারি করে ৫ আগস্টকে জাতীয় দিবস ঘোষণা করে এবং সরকারি ছুটি প্রদান করে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান কী?
“জুলাই গণ-অভ্যুত্থান” বলতে বোঝায় ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত জনতার স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন, যার প্রভাব এতটাই ব্যাপক ছিল যে দেশের শাসনব্যবস্থার ওপর একটি দৃঢ় প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। এ আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক দলের নয় বরং এটি ছিল একেবারে জনগণের — বিশেষ করে তরুণদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা।
এই অভ্যুত্থান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও তা শিরোনামে পরিণত হয়। এ আন্দোলনের সময়েই গণমাধ্যম, বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসনে ব্যাপক পরিবর্তনের দাবি ওঠে। সরকার প্রাথমিকভাবে এই আন্দোলন দমন করতে চাইলেও, ক্রমে এর জনসমর্থন এতটা বিস্তৃত হয়ে পড়ে যে, রাজনৈতিকভাবে এটি স্বীকৃতি দিতে হয়।
৫ আগস্টের সরকারি ছুটির আওতায় কী কী প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে?
বিভাগ | বন্ধ থাকবে কিনা |
---|---|
সরকারি অফিস ও আদালত | ✅ হ্যাঁ |
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান | ✅ হ্যাঁ |
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান | ✅ হ্যাঁ |
স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই/সিএসই) | ✅ হ্যাঁ |
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান | ❌ প্রতিষ্ঠানভেদে ভিন্ন হতে পারে |
শিল্প-কারখানা | ❌ বাধ্যতামূলক নয়, তবে অনেকে ঐচ্ছিক ছুটি দেয় |
কীভাবে দিবসটি পালন করা হবে?
প্রতিবছর ৫ আগস্টে দেশজুড়ে পালিত হবে “জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস”। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়ে থাকে যেমন:
শহীদদের স্মরণে ফুল দেওয়া ও আলোচনা সভা
ছাত্র-জনতার বীরত্ব ও আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে সেমিনার
ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
জেলা পর্যায়ে র্যালি ও জনসভা
বিশেষ প্রার্থনা ও মোনাজাতের আয়োজন
এছাড়া মিডিয়া ও সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মগুলোতেও দিবসটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়, নানা বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয় সংবাদপত্র ও অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোতে।
মানুষের মাঝে আলোচিত কিছু প্রশ্ন (FAQs)
৫ আগস্ট কি সরকারি ছুটি?
হ্যাঁ, এখন থেকে ৫ আগস্ট বাংলাদেশের একটি আনুষ্ঠানিক সরকারি ছুটি।
৫ আগস্ট কি দিবস?
৫ আগস্ট হলো “জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস” — একটি জাতীয় স্বীকৃত দিবস।
৫ই আগস্ট কি স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে?
হ্যাঁ, যেহেতু এটি সরকারিভাবে ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ থাকবে।
আগস্ট মাসে আর কী কী ছুটি থাকে?
আগস্ট মাসে সাধারণত জাতীয় শোক দিবস (১৫ আগস্ট) ও ঈদ বা বিশেষ ধর্মীয় দিবস পড়ে থাকলে ছুটি হয়। তবে ২০২৫ সাল থেকে ৫ আগস্ট নতুন করে যুক্ত হলো।
৫ আগস্ট কোথা থেকে ছুটি ঘোষণার সূচনা?
ছুটি ঘোষণাটি হয় একটি গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে, যেখানে “জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস”–কে ক শ্রেণির দিবস হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়।
উপসংহার
৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এটি কেবল একটি সরকারি ছুটি নয় — এটি গণতন্ত্র, জনগণের অধিকার, এবং রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিক দায়বদ্ধতার একটি প্রতীক। যারা এই দিনে আত্মত্যাগ করেছেন, তাদের স্মরণ করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সচেতন করাই এই দিবসের মূল লক্ষ্য।
এই দিনটির তাৎপর্য উপলব্ধি করে, আমাদের সবার উচিত এই দিবসকে সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে পালন করা এবং গণতন্ত্র ও ন্যায়ের পথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকা।
সূত্রসমূহ:
প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, ঢাকা ট্রিবিউন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (BSS), অবজারভার বিডি, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, সারাবাংলা, উইকিপিডিয়া
Thanks for reading. Please follow us on social media Facebook, Instagram, LinkedIn, Twitter, Tumblr, and Reddit, and don’t forget to like and subscribe to our YouTube channel. Also Read Quantum Mechanics and How it Describes Atoms