পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্বমতে, আমাদের এ বিশাল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে আমাদের মহাবিশ্বের মতোই সমান্তরাল কিছু মহাবিশ্ব রয়েছে, সামান্তরিক মহাবিশ্ব হলো বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে ঠিক আমাদের ব্রহ্মাণ্ডের মতো আরও একটি বা একাধিক ব্রহ্মাণ্ড যা ঠিক আমাদেরই মতো। সেখানকার প্রকৃতি, ভূমণ্ডল এমনকি প্রাণিজগৎও একেবারে আমাদেরই মতো। হুবহু আমাদেরই মতো দেখতে সবকিছু। একেবারে যেন আমাদের যমজ বিশ্ব।

সেখানে হয়তো এখন আপনার সদৃশ আপনার মতো ই দেখতে কেউ একজন প্যারালাল ইউনিভার্স নিয়ে অতি আগ্ৰহ নিয়ে পড়ছে। অর্থাৎ, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কোথাও না কোথাও একইরকমের কিছু সমান্তরাল মহাবিশ্ব রয়েছে, যারা একে অপরের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানে না। একেই সাধারণভাবে প্যারালাল ইউনিভার্স বলা হয়ে থাকে।
প্যারালাল ইউনিভার্সের ধারণা অনুযায়ী, হয়তো এই গ্রহে আপনি একজন ডাক্তার কিন্তু এমনো হতে পারে সমান্তরাল মহাবিশ্বের গ্রহে আপনি একজন ক্রিকেটার। হয়তো সাকিব আল হাসান এই গ্রহে ক্রিকেটার, কিন্তু অন্য গ্রহে তিনি অভিনেতা। অথবা এটাও হতে পারে যে, পৃথিবীতে আপনারা এখন আমার লেখাটি পড়ছেন কিন্তু অন্য গ্রহে আপনারা এটা আগেই দেখে ফেলেছেন।
অনেকের কাছে এগুলো কল্পকাহিনী মনে হবে, মনে পড়বে হলিউডের সায়েন্স ফিকশন মুভির কথা যেখানে প্যারালাল ইউনিভার্স সম্পর্কিত কল্পকাহিনী দেখানো হয়েছে।
কিন্তু, প্যারালাল ইউনিভার্স কোনো কল্পকাহিনী নয় এটি পদার্থবিজ্ঞানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ও মূল্যবান একটি তত্ত্ব। বিশ্বের বড় বড় পদার্থবিজ্ঞানীরা প্যারালাল ইউনিভার্স এর অস্তিত্বের সমর্থন দিয়েছেন।
প্যারালাল ইউনিভার্স সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আমাদের কোয়ান্টাম মেকানিক্স (Quantum mechanics) বুঝতে হবে কিন্তু কোয়ান্টাম মেকানিক্স পদার্থবিজ্ঞানের অত্যন্ত জটিল ও দুর্ভেদ্য গানিতিক একটি বিষয় তাই অধিকাংশ মানুষ ই এর কিছু ই বুঝবেন না তাই আমি প্যারালাল ইউনিভার্স এর বিস্তারিত ব্যাখা করতে যাবো না।
মূলত, সময় পরিভ্রমণ (Time Travel) সংক্রান্ত জটিলতার উত্তর খুঁজতে গিয়ে প্যারালাল ইউনিভার্সের সম্ভাবনাটি সামনে আসে। টাইম ট্রাভেল বা সময় পরিভ্রমন তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব হলেও অতীত পরিভ্রমণ নিয়ে কিছু ঘোলাটে রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হলো “Grandfather Paradox” ধরুন, কোনো এক লোক সময় পরিভ্রমণ করে অতীতে গিয়ে তার দাদুকে শিশুবয়সী অবস্থায় মেরে ফেললো।
কিন্তু এটি যদি কেউ সত্যি সত্যি করতে পারে, তবে তার দাদুর তো প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার কথা না, তাহলে বিয়ে করার কথা না, বিয়ের পর সন্তানের জন্ম দেয়ারও কথা না, এমনকি নাতী-নাতনী থাকার কথা না। তাহলে, যদি কেউ অতীতে গিয়ে তার দাদুকে মেরেই ফেলে, তাহলে সেই হত্যাকারী নিজেই বা আসলো কোথা থেকে? তার অস্তিত্ব তো থাকার কথা নয়!!!
এই প্রশ্নের সম্ভাব্য কিছু উত্তরের একটি উত্তর হলো প্যারালাল ইউনিভার্স। বিজ্ঞানীদের মতে, কেউ যদি অতীত পরিভ্রমণ করতে চায়, তবে সে ওয়ার্মহোলের (Wormhole) এর মধ্যে প্রবেশ করার পরে একই রকমের দেখতে অন্য একটি মহাবিশ্বে প্রবেশ করবে, সেখানে গিয়ে সে যদি তার দাদুর মতো কাউকে হত্যাও করে, তবে তা বিশেষ কোনো প্রভাব ফেলবে না।
কারণ ওয়ার্মহোলের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করা সেই সমান্তরাল মহাবিশ্বে হত্যাকারীর কখনোই কোনো অস্তিত্ব ছিলো না! তাছাড়াও, যেহেতু সময় সবসময় সামনের দিকে এগোয়, কখনোই পেছনের দিকে যায় না, সুতরাং অতীতে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে এমন এক মহাবিশ্বে প্রবেশ করা যেখানে সময় উল্টোদিকে প্রবাহমান। আর এই বৈজ্ঞানিক সম্ভাবনা এমন কোনো মহাবিশ্বে সম্ভব যেখানে সময় উল্টোদিকে প্রবাহিত হয়ে থাকে।
মূলত সময় পরিভ্রমণ ব্যাখা করতে গিয়ে প্যারালাল ইউনিভার্স এর তত্ত্বটি সামনে আসে। এছাড়া আরো কয়েকটি স্বীকৃত তত্ত্ব আছে যেমন স্রডিঞ্জারের বেড়াল তত্ত্ব, স্টিং তত্ত্ব।
এবার আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে ওয়ার্মহোল মানে কি! ওয়ার্মহোল বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে অনেক অনেক কথা আর অসংখ্য বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের সমাহার উপস্থিত করা লাগবে, তাই আমি অতি সংক্ষেপে বলছি, একটি পোকা যেমন মাটি খুঁড়ে পৃথিবীর এক স্থানের সাথে অন্য স্থানের একটি সংক্ষিপ্ত রাস্তা তৈরি করতে পারে, তেমনি একটি ওয়ার্মহোল ও মহাবিশ্বের দুটি স্থানের ভেতর একটি বিকল্প সংক্ষিপ্ত রাস্তা তৈরি করে ফেলতে পারে।
প্যারালাল ইউনিভার্স এ প্রবেশের মাধ্যম হলো এই ওয়ার্মহোল। আমি আর সামনে এগোচ্ছি না।
আসলে, আমাদের এ মহাবিশ্ব কে উপরে উপরে সহজ সরল দেখা গেলেও এর মধ্যে লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য ও অনেক জটিল সত্য যেগুলো আমাদের কল্পনার ও বাইরে।
আপনি বা আমি হয়তো চোখে দেখছি স্পেস টা খালি জায়গা কিন্তু এই খালি জায়গাতেই এমন এমন সত্য লুকিয়ে আছে যা আমাদের দৃশ্যমান নয়। পদার্থবিজ্ঞানের মূল কাজ হলো এই অদৃশ্যমান রহস্যময় সত্যগুলোকে উদঘাটন করা।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করে সাথেই থাকুন এবং আমাদের ভিডিওগুলো দেখুন ইউটিউবে
Read More: