এরকম আরও কিছু বিষয় আছে যেগুলো অন্যকে আপনার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনাতে সাহায্য করবে। চলুন এমনই ৫টি বিষয় জেনে নেয়া যাক:

০১. শ্রোতা বুঝে কথা বলুন

সব মানুষ সব ধরনের কথা বোঝে না। আপনার কথা একজন শুনছেনা মানে এই নয়, যে সে কথা শুনতে আগ্রহী নয়। হয়তো আপনি তাকে ঠিকমত বোঝাতে পারছেন না। সাহিত্যে পড়াশুনা করা একজন মানুষকে যদি বিজ্ঞান বোঝাতে হয় তবে তাকে বিজ্ঞানের জটিল জটিল সমীকরণ ব্যাখ্যা করার বদলে সহজ ভাষায় বোঝাতে হবে। এমনি সাহিত্যের উদাহরণ দিয়ে বিজ্ঞান বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে।

এতে করে সে সহজে আপনার বক্তব্য বুঝতে পারবে, আর তার বিষয়ের সাথে মিলিয়ে তাকে বোঝানোর কারণে সে আপনার কথা শুনতেও আগ্রহী হবে।

মনে রাখবেন, প্রয়োজনটা আপনার। প্রয়োজনে সে কিভাবে বললে বুঝবে – তা নিয়ে একটু গবেষণাও করতে হবে। একজন মানুষ যখন দেখবে আপনি তার ব্যক্তিগত আগ্রহের বিষয়ে আগ্রহী তাহলে সে আপনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখানোটা দায়িত্ব মনে করবে।

০২. বিভিন্ন ধরনের শেখার প্যাটার্ণ সম্পর্কে জানুন

আপনি কি জানেন, কেন অনেক মেধাবী মানুষ পড়াশুনায় ভালো হন না? আবার পড়াশুনায় ভালো অনেক মানুষ অনেক সহজ ব্যাপার কেন সহজে বুঝতে পারেন না?এর কারণ, সবার শেখার প্যাটার্ণ এক রকম নয়। কেউ পড়ে ভালো বোঝে, কেউ দেখে বোঝে, কেউ শুনে বোঝে, আর কেউবা হাতে কলমে করার আগ পর্যন্ত কোনও ব্যাপার ভালোভাবে বুঝতে পারে না।

মানুষ মূলত পড়া, শোনা, দেখা এবং হাতেকলমে করা – এই চারটির কোনও একটি প্যাটার্ণে শেখে। এক একজন মানুষ এক এক ধরনের প্যাটার্ণে বুঝতে পছন্দ করে। ইংরেজীতে একে “Learning Pattern” বলে।

এখন, যে মানুষটি পড়ে শিখতে পছন্দ করে, কিন্তু শুনে শিখতে বা জানতে পছন্দ করে না – সে আপনার কেন, কারও কথাই মনোযোগ দিয়ে শুনবে না।আপনি যাকে আপনার বক্তব্য বোঝাতে চাচ্ছেন, আগে বোঝার চেষ্টা করুন – সে কোন প্যাটার্ণে পড়ে। সে যদি পড়ে জানতে পছন্দ করে – তবে তাকে বলার বদলে লিখিত আকারে আপনার বক্তব্যটি দিন।

যদি দেখে বুঝতে পছন্দ করে তবে সম্ভব হলে একটি প্রেজেন্টেশন তৈরী করুন। যেখানে ছবি বা ভিডিও আকারে আপনার বক্তব্যটি থাকবে।ব্যক্তিগত পর্যায়ের চেয়ে এই কৌশলটি কর্মক্ষেত্রে বেশি কাজে দেয়।

০৩. আগে অন্যকে বলতে দিন

আগেই বলেছি, বেশিরভাগ মানুষ অন্যের কথা শোনার চেয়ে নিজের কথা বলতে বেশি আগ্রহী হয়। নিজের কথা বলার আগে তারা অন্যের কথা শুনতেই চায় না। এটা একটা অসুবিধা। কিন্তু এটাকেও সুবিধায় পরিনত করা যায়।

আপনি যদি এমন কারও সাথে কথা বলতে যান, যে নিজের কথা বলতে বেশি পছন্দ করেন – তাহলে আগে তার কথা শুনে নিন। আপনি যদি প্রথমেই তাকে থামিয়ে দিয়ে বা তার কথার মাঝখানে নিজের কথা বলতে শুরু করেন – তাহলে সে কোনওভাবেই আপনার কথা শুনতে আগ্রহী হবে না। সে শুধু আপনার কথা শেষ হওয়ার অপেক্ষা করবে – যাতে সে নিজের কথা আবার শুরু করতে পারে।

কাজেই, যদি আপনাকে দেখে কেউ তার নিজের কথা বলতে শুরু করে – তাকে আগে শেষ করতে দিন। এবং শুধু শুনে গেলেই হবে না। সে যেন বোঝে যে, আপনার তার কথায় আগ্রহ আছে। ধৈর্যের সাথে তার কথা শুনুন, এবং চেহারায় আগ্রহ প্রকাশ করুন। এতে করে সে-ও পরে আপনার কথা শুনতে আগ্রহী হবে।

এভাবে একবার যখন সে পুরোপুরি নিজের কথা বলা শেষ করবে, আপনি তারপর নিজের কথাটি তাকে বলুনন। নিজের কথা বলা হয়ে যাওয়ায় সে অনেকটা স্থির হয়ে যাবে, এবং মনোযোগের সাথে আপনার কথা শুনবে।

০৪. বেশি বেশি প্রশ্ন করুন

মন্তব্যের চেয়ে প্রশ্ন মানুষের চিন্তা ও মনোযোগকে বেশি এ্যাকটিভ করে। এটা আপনি অন্যকে কথা শোনানোর ব্যাপারে কাজে লাগাতে পারেন। বিশেষ করে যখন খুব বিস্তারিত ভাবে কাউকে কিছু বলছেন বা বোঝাচ্ছেন – তখন এই কৌশলটি দারুন কাজে আসে।

বিস্তারিত ভাবে কিছু বলার বা বোঝানোর সময়ে মাঝে মাঝে সামনের মানুষকে প্রশ্ন করুন। এতে কথপোকথনটি একপেশে হবেনা। আপনার বক্তব্যের প্রতিটি পয়েন্ট শেষ করার পর অপর পক্ষের জন্য কথা বলার সুযোগ সৃষ্টি করুন।

ধরুন, আপনি একটি নতুন আইডিয়ার কথা কারও কাছে শেয়ার করলেন, নিজের কথা বলার একটা পর্যায়ে তাকে জিজ্ঞাসা করুন, “ব্যাপারটা আপনার কেমন মনে হয়?” – অথবা “এভাবে আমি চিন্তা করেছি, আপনার কি মনে হয়?”

মানুষের একটি স্বভাব হল, তার কাছে কিছু জানতে চাইলে সে মনে করে তাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এবং গুরুত্ব দেয়ার ফলে সে মনোযোগ দিতে আগ্রহী হয়।

এই পদ্ধতি বিশেষ করে কাউকে কিছু শেখানোর ক্ষেত্রে খুব কাজে লাগে। অনেক শিক্ষক আছেন, যাঁরা শুধু নিজের মত লেকচার দেয়ার বদলে মাঝে মাঝে ছাত্রছাত্রীদের কাছে মন্তব্য নেন। এটা তাদের শিক্ষকের কথা শোনার ব্যাপারে অনেক বেশি মনোযোগী করে তোলে।

আপনার প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ক্ষেত্রেও এটা কাজে লাগাতে পারেন। নতুন কোনও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগে কর্মীদের সাথে সেটা নিয়ে আলোচনা করার সময়ে তাদের কাছে সেই ব্যাপারে জানতে চাইতে পারেন।

আপনার চেয়ে উপরের পজিশনের কারও কাছে কিছু বলতে গেলে প্রথমেই তাকে পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করার বদলে মোটামুটি একটা ধারণা দিয়ে তারপর তার পরামর্শ চান। দেখবেন, আপনার বক্তব্য সে মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করছে।

০৫. বোঝাপড়া তৈরী করুন

মানুষকে আপনার কথা শোনানোর জন্য একটি সম্পর্ক খুব জরুরী। সম্পর্ক মানেই যে বন্ধু, আত্মীয় বা এই ধরনের কিছু হতে হবে – তা নয়। একটি ভালো বোঝাপড়া তৈরী করতে হবে।দুইজন মানুষের মাঝে ভালো বোঝাপড়া থাকলে একজন আরেকজনের কথা শুনতে আগ্রহী হয়।

এই বোঝাপড়াটা কিভাবে তৈরী করবেন?

মানুষ তার কথা শুনতেই বেশি আগ্রহী হয়, যে তার ব্যাপারে আগ্রহী। হয়তো আপনার একজন সহকর্মী, কর্মী বা আত্মীয়কে আপনি কিছু একটা বলতে চাচ্ছেন। কিন্তু কোনওভাবেই তাকে মনোযোগী করতে পারছেন না।

এর কারণ হতে পারে আপনার সাথে তার তেমন কোনও বোঝাপড়ার সম্পর্ক নেই। এই সম্পর্ক তৈরী করার জন্য কাজের কথার বাইরেও তার সাথে দু’একটি কথা বলুন। ব্যক্তিগত খোঁজ খবর নিন। চেষ্টা করুন, আপনার ও তার মাঝে কোনও বিষয়ে মিল খুঁজে পাওয়ার। মিল খুঁজে না পেলে মিল তৈরী করে নিন। হয়তো সে রবীন্দ্রনাথের অনেক বড় ভক্ত।

আপনি রবীন্দ্রনাথের লেখাগুলো একটু পড়ে দেখুন, তাঁর সম্পর্কে একটু জ্ঞান নেয়ার চেষ্টা করুন। তারপর তার সাথে রবীন্দ্রনাথের বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করুন। তাকে দেখান এই বিষয়ে আপনারও বেশ আগ্রহ আছে। – দেখবেন সে আপনার সব কথাকেই আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

পছন্দগত মিল মানুষের মাঝে খুব দ্রুত বোঝাপড়ার সম্পর্ক তৈরী করে। আরেকজন কি পছন্দ করছে, সেটা খুঁজে বের করে যদি সেটার ওপর ভিত্তি করে তার সাথে একটি বোঝাপড়া সৃষ্টি করতে পারেন – তবে আপনার যে কোনও কথাই সে মনোযোগ দিয়ে শুনবে।

তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট

আরও পড়ুনঃ

কিছু সত্যিকারের প্রয়োজনীয় শিক্ষা ব্যবস্থা আমার দেশ ও সমাজ এর