ধুমকেতু এর শেষ পরিণতি কী হয়? কোথায় গিয়ে শেষ হয় ধুমকেতুর জীবন ?

এর আগে আমরা জেনেছি কিভাবে ধুমকেতু জন্ম হয় এবং কিভাবে নামকরন করা হয়,

এ পর্বে আমরা কথা বলব ধুমকেতু শেষ পরিনতি নিয়ে :

কুইপার বেল্ট ও ওর্ট মেঘে থাকা অবস্হায় ধুমকেতুগুলো মোটামুটি সুস্থ অবস্থায় থাকে।
কিন্তু যখন তাদের সে কক্ষপথ পরিবর্তিত হয়ে সৌরজগতের ভেতরে সুর্যের দিকে অগ্রসর হতে থাকে তখন থেকেই তাদের অবস্হা অস্থিতিশীল হয়ে যায়।
সুর্যের নিকট প্রথম আবর্তনটি সম্পন্ন করতে পারে এবং এরপর পুনরায় তার উৎপত্তিস্হল ওর্ট মেঘ বা কুইপার বেল্টে চলে যায়।
এরপর দ্বিতীয়বার যখন আবার আবর্তনরত অবস্হায় সূর্যের নিকটতম স্হান তথা তার অনুসূর অবস্থানে আসে তখন
অনেক সময় সুর্যের গ্র্যাভিটিতে আটকা পড়ে তা আর মুক্তি পেয়ে পুনরায় যেতে পারে না, সূর্যে পতিত হয়।

 

সরাসরি সুর্যের কাছে আসতে পারে সাধারনত সেসব ধুমকেতু যেগুলো তাদের আবর্তনের গতিপথে অন্য কোন বস্তুর সাথে সংঘর্ষ বা কোন গ্রহের মহাকর্ষীয় প্রভাবে পড়ে নি।
যখন কোন ধুমকেতু সৌরজগতের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করার সময় কোন গ্রহের মহাকর্ষীয় প্রভাবের ভেতর পড়ে তখন তিন ধরনের ঘটনা ঘটতে পারেঃ

1) ধূমকেতুটি সরাসরি গ্রহে পতিত হবে এবং তার জীবনকালের সমাপ্তি তখনই ঘটবে।

2) গ্রহটির মহাকর্ষ তাকে প্রচন্ডবেগে ধাক্কা দেয়।
এতে ধুমকেতুটির আবর্তন গতি ও গ্রহের মহাকর্ষ কর্তৃক প্রযুক্ত ধাক্কার বেগ দুইএ মিলে এটি এতো বেশি গতিপ্রাপ্ত হয় যে সরাসরি তা সৌরজগত অতিক্রম করে চলে যেতে পারে।

3) অথবা, তার কক্ষপথ পরিবর্তিত হয়ে স্বল্প আবর্তনকাল বিশিষ্ট কক্ষপথে রুপান্তরিত হবে।
এমতাবস্থায়, পরবর্তীতে ধুমকেতুটি আর কয়েক হাজার বছর টিকে থাকে এবং সুর্যের চারপাশে তা যতোবার আবর্তন করবে
ততোবারই তার কিছু কিছু গাঠনিক বস্তু তথা ভর বিচ্ছিন্ন হয়ে হারাতে থাকে। পৃথিবী যখন সে কক্ষপথের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করে তখন সেসব ফেলে যাওয়া বস্তুর সাথে সংঘর্ষও হয়।

আসুন একটু বিশদ ভাবে জেনে নেয়া যাক ধুমকেতুর শেষ পরিণতি সম্পর্কে:

ধুমকেতুগুলো যতোবার সুর্যের চারপাশে আবর্তন করে এবং এতে যতোবার তারা সুর্যের নিকটবর্তী হয়, তাদের প্রত্যেক এ অনুসুর অবস্হানে কিছু কিছু মাত্রায় ভর হারায়।
সাধারনত একটি ধুমকেতু তার প্রত্যেক অনুসুর অবস্হানে তার মোট ভরের ৬০ ভাগের ১ ভাগ থেকে ১০০ ভাগের ১ ভাগ পর্যন্ত ভর হারায়।
এভাবে গড়ে একটি ধুমকেতুর বরফীয় অংশ সম্পুর্নরুপে নিঃশেষ হতে প্রায় ১০০ বার আবর্তন সম্পন্ন করতে পারে।

হ্যালির ধূমকেতু এখন পর্যন্ত প্রায় ২৭ বার আবর্তন করেছে সূর্যকে৷

এ হিসেবে হ্যালির ধুমকেতুর বরফ অংশ সম্পুর্ন রুপে নিঃশেষ হতে হতে আরও তা প্রায় ৭৩ বার আবর্তন করতে পারবে।
সুতরাং, এ হিসেবে হ্যালীর ধুমকেতু আর মোটামুটি ৭৩×৭৬= ৫৫৪৮ বছর সক্রিয় থাকবে।
এরপর তার বরফঅংশ বাষ্পীভূত হয়ে যাবে এবং তার নিউক্লিয়াস অংশটি তার বরফ অংশ হারিয়ে গ্রহানু সৃদশ বস্তুতে পরিণত হবে।
ধুমকেতু তার লেজ বা তার বৈশিষ্ট্যসুচক রুপ ধারনই করে মুলত তার বরফ অংশের কারণে।
তাই, এটি যখন নিঃশেষ হয়ে যায় ধুমকেতুও তার রুপ হারিয়ে ফেলে এবং তা গ্রহানুসদৃশ বস্তুতে পরিণত হয়।

আজ এ পর্যন্তই  ভালো লাগলে লাইক করুন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
পড়ার  জন্য ধন্যবাদ

আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের ভিডিও গুলো দেখতে এখানে ক্লিক করুন

ইগো আসলে কী? গর্ব, অহংকার ও ইগোকে আলাদা করে কীভাবে বোঝা সম্ভব?

ইগো আসলে কি?

ইগোর অনেকগুলো প্রচলিত সংজ্ঞা আছে, তবে রায়ান হলিডের মতে ইগো হচ্ছে “নিজের বড়ত্বের প্রতি একটি অস্বাভাবিক বিশ্বাস। যার সাথে মিশে থাকে অতি অহঙ্কার এবং আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর উচ্চাকাঙ্খা।”

লেখকের মতে, আমরা সবাই জানি ইগো একটি খারাপ জিনিস, এবং এটা আমাদের সবার মাঝেই কিছু না কিছু মাত্রায় আছে। আর সেজন্যই এটা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বও আমাদের। ইগো কিভাবে আপনার জীবনকে খারাপ বা ভালো দিকে নিয়ে যেতে পারে, বইয়ে লেখক তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

নিজের প্রতি অস্বাভাবিক ও অবাস্তব উঁচু ধারনা একজন মানুষের সাফল্যের যাত্রাকে পুরোপুরি থামিয়ে দিতে পারে। ইগো আসলে মানুষের মাঝে বাস করা ছোট্ট শয়তানের মত যে একজন মানুষ আসলে যতটা বড়, তাকে তারচেয়েও অনেক বড় হিসেবে ভাবতে শেখায়।

আপনার মাঝে বড় হবার সম্ভাবনা আছে, এবং কাজ করলে আপনি আসলেই অনেক বড় হতে পারবেন – এটা আত্মবিশ্বাস। কিন্তু আত্মবিশ্বাসী মানুষ এটাও জানে যে তার বর্তমান অবস্থা কি। সে যতটা বড় হতে চায়, ততটা বড় হতে হলে তাকে আরও কতটা কাজ করতে হবে সেটা সে খুব ভালকরে জানে।

যার মাঝে ইগো আছে, সে সত্যিকার বড় হওয়ার আগেই নিজেকে বড় ভাবতে শুরু করে। তার এই ভাবনা তাকে সত্যিকার বড় হওয়ার পথে এগুতে বাধা দেয়। কারনটা খুব স্বাভাবিক, আপনি যদি আগেই ভেবে বসে থাকেন আপনি ইতোমধ্যেই অনেক বড় কিছু করে ফেলেছেন, তবে আর সত্যিকার বড় কিছু করার জন্য কষ্ট করার দরকার মনে করবেন না।

ইগো আমাদের সাথে এই খেলাটাই খেলে। ইগো সম্পন্ন মানুষ তার মিথ্যা অহঙ্কার নিয়ে বসে থাকে, আর অন্যরা তাকে টপকে সত্যিকারের বড় হয়ে ওঠে।

ইগো’র প্রধান লক্ষণ

১. ভুল করেও ভুল স্বীকার করতে চায় না:

একজন মানুষের মধ্যে যে প্রবল ইগো সমস্যা আছে তার একটি প্রধান লক্ষণ তারা ভুল করেও ভুল স্বীকার করতে চায় না। অনেক সময়ে ভুল বুঝতে পারলেও তারা তা স্বীকার করে না। সেই অস্বীকার যেমন অন্যদের কাছে করে, তেমনি তাদের নিজেদের কাছেও করে। আর ভুল স্বীকার না করলে সেই ভুল শোধরানোও অসম্ভব।
ধরুন, একজন ইগো সম্পন্ন মানুষের যদি ইংরেজী গ্রামারে সমস্যা থাকে, এবং আপনি যদি তাকে সেটা ধরিয়ে দিতে যান, তাহলে সে আপনারই ওপর রাগ করবে। পরীক্ষায় নম্বর কম পেলে সেটা হবে শিক্ষকের দোষ, কিন্তু নিজে নিজের জ্ঞান বাড়ানোর কোনও চেষ্টা সে করবে না।

২. নিজেকে একটু বেশি জ্ঞানী মনে করে:

ইগো সম্পন্ন মানুষদের আরও একটি ব্যাপার, তারা নিজেরা যতটুকু জানে, তার তুলনায় বেশি জ্ঞানী বলে নিজেদের জাহির করতে চায়। আপনি যদি মনে করেন তারা শুধু অন্যদেরকে বিশ্বাস করাতে চায় যে তারা বেশি জানে, তাহলে ভুল করবেন। এরা আসলে নিজেরাও বিশ্বাস করে যে তারা যে কোনও বিষয়ে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী।

৩. তর্কে হার মানবে না:

একজন ইগো সম্পন্ন মানুষকে আপনি কখনও যুক্তি দিয়ে বোঝাতে পারবেন না। মানে, তারা কখনও তর্কে হার মানবে না। তারা যদি বোঝেও যে তাদের তুলনায় তাদের সামনের মানুষটির কথা বেশি যুক্তিসঙ্গত ও প্রমানিত, তারপরও তারা মানবে না।

৪. পরিস্থিতি বা অন্য মানুষের ওপরে দোষ চাপায়:

একজন ইগোর দ্বারা অসুস্থ মানুষ ব্যর্থ হলেও সেই ব্যর্থতা থেকে না শিখে সব সময়ে পরিস্থিতি বা অন্য মানুষের ওপরে দোষ চাপাতে ভালবাসে। তারা কখনও নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে না তাদের কোথায় গলদ আছে। এর কারন তারা একটি ঘোরের মাঝে থাকে। তারা ভাবে, তাদের মধ্যে কোনও খুঁত নেই এবং সেই কারনে তারা কোনওভাবেই ভুল করতে পারে না।

৫. ঈর্ষা, পরনিন্দা, হিংসা ইগোর ফলাফল :

আগেই বলা হয়েছে, ঈর্ষা, পরনিন্দা, হিংসা ইত্যাদি ইগোর অংশ। এগুলো আসলে ইগোর ফলাফল। একজন মানুষ যখন ইগোর শিকার হয় তখন সে অযথাই নিজেকে অন্যদের চেয়ে বড় ভাবতে শুরু করে। তারচেয়ে কেউ কোনও কিছুতে ভাল হলে সে কোনও না কোনও ভাবে তার ভুল ধরার চেষ্টা করে। যে কোনও ভাবে অন্য মানুষকে ছোট করার চেষ্টা করতে থাকে। আর এর ফলে সাধারন মানুষ তো তাকে পছন্দ করেই না, কাছের মানুষগুলোও দূরে চলে যায়। ইগো আসলে একটি মানসিক প্যারালাইসিস, যা আপনাকে শোয়া অবস্থায় বিশ্বাস করায় আপনি এখন উড়ছেন।

ইগো জীবনে তিনটি পযায়ে বেশি প্রভাবিত কবে

‘ইগো ইজ দ্যা এনিমি’ বইয়ে লেখক জীবনের প্রধান তিনটি পর্যায়ের কথা বলেছেন, যেগুলোকে ইগো সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করতে পারে। এই জায়গাগুলোতে ইগো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি, এবং এটা পথ থেকে ছিটকে দিতে পারে। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এই তিনটি পর্যায় নিন্মরূপ:

লক্ষ্য ও আকাঙ্খা : জীবনের এই ভাগে মানুষ তার জীবনের লক্ষ্য নির্ধারন করে, এবং তা পূরণ করার আশায় বুক বাঁধে।
প্রাথমিক সাফল্য:  জীবনের এই ভাগে মানুষ তার লক্ষ্য পূরণ করতে শুরু করে, এবং অন্যদের কাছ থেকে প্রশংসা পেতে শুরু করে।
ব্যর্থতা:  এই ক্ষেত্রে মানুষের সার্বিক অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ে এবং তার ওপরে আসা ব্যক্তিগত ও সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা তাকে সামলাতে হয়।

আকাঙ্খা ও ইগোর মাঝে পার্থক্য:

লেখকের মতে, যাদের মাঝে সত্যিকার লক্ষ্য ও আকাঙ্খার বদলে ইগো আছে, তারা আসলে কাজ করে না। কাজের চেয়ে তারা কথা বলেই বেশি সময় নষ্ট করে।

ইগো একজন মানুষকে  বিশ্বাস করায় যে সে সব জানে। আকাঙ্খা একজন মানুষকে বিশ্বাস করায় যে শেখার কোনও শেষ নেই। একটু সাফল্য পেলেই মানুষ নিজেকে অনেক বড় কিছু ভাবতে শুরু করে যদি তার মাঝে ইগো বেশি পরিমানে থাকে। যতটা সাফল্য না সে অর্জন করেছে, তার শরীরী ভাষায় ও কথাবার্তায় তারচেয়ে বেশি অহঙ্কার দেখা যায়। আর এই দম্ভ বা অহঙ্কারই হয় তাদের পতনের কারন।

অন্যদিকে যারা নিজেদের ইগোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তারা জানে যে তাদের শেখা ও উন্নতি করার এখনও অনেক সুযোগ রয়েছে। তারা অহঙ্কার না করে বরং বিনয়ের সাথে আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।

ব্যর্থ হলে একজন ইগো সম্পন্ন ব্যক্তি সব সময়ে অন্যকে দোষ দিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করে। নিজের কোথায় ভুল বা কমতি ছিল – তা না দেখে নিজের কাছে ভাল থাকতে চায়। অন্যদিকে একজন সত্যিকার কাজের মানুষ লক্ষ্যপূরণের পথে তার ভুল গুলোকে সুন্দর ভাবে পর্যবেক্ষণ করে সেগুলো থেকে শিক্ষা নেয়।

ইগো থেকে মুক্তির উপায়:

১. ক্যানভাস পদ্ধতি:

লেখকের মতে, এই পদ্ধতিতে ইগোকে জয় করতে গেলে আপনাকে স্বল্পমেয়াদী সাফল্যে খুব বেশি খুশি হওয়া বাদ দিতে হবে। তার বদলে দীর্ঘ মেয়াদে নিজের উন্নতি করার অভ্যাস করতে হবে। লেখক বলেন, স্বল্প মেয়াদী সাফল্যের খুশি আসে আত্মতুষ্টি থেকে । আর এই আত্মতুষ্টি মানুষকে অনুপ্রাণিত করার বদলে অহেতুক গর্ব সৃষ্টি করে। নিজের লক্ষ্য অর্জনের ক্যানভাসটিকে সবসময়ে বড় করে দেখলে সামনে সব সময়ে একটির পর একটি নতুন লক্ষ্য আসতে থাকে। এতে করে সে নিজের বর্তমান জ্ঞান অথবা সাফল্যতেই খুব বেশি আত্মহারা হবে না। বরং সে নিজের উন্নতির আরও ক্ষেত্র দেখতে পাবে।

ধরুন আপনি ২৬ কিলোমিটার ম্যারাথনে অংশ নিতে চান। কিন্তু আপনি যদি ৫ কিলো দৌড়ানোর দক্ষতা অর্জন করেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে নিজেকে মহান দৌড়বিদ ভাবতে শুরু করেন – তাহলে কিন্তু আপনার ২৬ কিলো দৌড়ানোর দক্ষতা অর্জন করতে যে যা করতে হবে – তা আর করার ইচ্ছা থাকবে না। পুরো ক্যানভাসটিকে সব সময়ে মনের পর্দায় ভাসিয়ে রাখতে হবে। পাঁচ মাইলের দক্ষতা অর্জনের পরে আপনি যখন সামনে তাকিয়ে দেখবেন আরও ২১ মাইল বাকি, তখন আপনা আপনিই আরও ভাল করার তাড়া আসবে। এরপর সেই লক্ষ্য পূরণ হলে আপনার লক্ষ্য আরও বড় প্রতিযোগীতায় অংশ নেয়া। বড় মনের সফল মানুষেরা এই কারনেই সব সময়ে ‘নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে’ চান।

ক্যানভাস পদ্ধতি অনুসরন করে কাজ করতে হলে লেখক যে কোনও কাজের শুরুতে দুটি বিষয় মাথায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।

• ১.১/ বিনীত থাকা:

যে কোনও কাজ শুরু করার আগে ভেবে নিন আপনি নিজেকে যতটা ভাবছেন ততটা গুরুত্বপূর্ণ আপনি নন। আগে সফল হোন, তারপর নিজের গুরুত্ব নিয়ে চিন্তা করুন। লেখকের মতে, এই ভাবনা আপনাকে কাজের সময়ে বিনীত ও শান্ত থাকতে সাহায্য করবে।

অনেক সময়েই দেখবেন গ্রেট গ্রেট খেলোয়াড় বিশ্বকাপ বা এই ধরনের কিছু জিতলে বলেন, যে তাদের আরও উন্নতি করার জায়গা আছে। সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড গড়া হলে অনেক সেরা খেলোয়াড় বলেন যে তারা রেকর্ডটিকে সামনে আরও উপরে নিয়ে যেতে চান।

“নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে” চান। এর কারন তারা সব সময়ে সতর্ক থাকেন, তাদের অর্জন যেন তাদের ইগোর শিকার না বানায়। একটি বড় লক্ষ্য পূরণ হলে তাঁরা আরও বড় লক্ষ্যের দিকে চোখ দেন।

• ১.২/ জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা মাথায় রাখা:

কোনও কাজ শুরুর আগে সব সময়ে মাথায় রাখুন আপনি আসলে সেই কাজের বিষয়ে কতটা জানেন। একটি বিষয় মনে গেঁথে নিন, কোনও বিষয়েই জানার কোনও শেষ নেই, এবং আপনি এই কাজটির বিষয়েও সবকিছু জানেন না। কাজেই আপনার এই কাজ থেকেও নতুন অনেক কিছু শেখার আছে। শুধু নিজের সাফল্যে খুশি হওয়ার ক্ষেত্রের কথাই লেখক এই অধ্যায়ে বলেন নি। তিনি বলেন যে, আমাদের শুধু একার সাফল্য নিয়েই ভাবলে চলবে না।

ক্যানভাসটিকে আরও বড় করতে হলে, আমাদের অন্যদের নিয়েও ভাবতে হবে। একজন মানুষের সাফল্য বেশিরভাগ সময়েই অন্য আরও কিছু মানুষের সাফল্যের হাত ধরে আসে। ইগোকে পাশ কাটিয়ে সাফল্য পেতে গেলে আপনাকে এমন ভাবে কাজ করতে হবে যাতে করে অন্যদের জন্যও তাদের কাজ করাটা সহজ হয়ে যায়।

ক্যানভাস পদ্ধতিটি রপ্ত করার জন্য লেখক প্রাচীন স্টইকদের মত করে চিন্তা করার পরামর্শ দিয়েছেন। স্টইকরা নিজেদেরকে “জীবনের ছাত্র” হিসেবে দেখত। তারা জীবনভর শিখে যাওয়াকে তাদের জীবনের ব্রত হিসেবে পালন করত। আর এই মানসিকতা তাদের সব সময়ে বিনয়ী ও নিরহঙ্কার থাকতে অনুপ্রেরণা যোগাত। সেইসাথে তারা যা জানতে চায়, সেই বিষয়ে সেরা মানুষদের কাছ থেকে শিখতে পারত।

লেখক এই অধ্যায়ের শেষ করেছেন দার্শনিক এপিকটেটাস এর একটি উক্তি দিয়ে – “যদি মানুষ মনে করে যে সে কোনও কিছু জেনে ফেলেছে, তাহলে তার পক্ষে তা (সত্যিকার অর্থে) জানা অসম্ভব।

০২. কাজ ও বিশ্বাস পদ্ধতি

লেখকের মতে এই পদ্ধতিতে ইগোকে জয় করতে গেলে প্রথমেই যা করতে হবে, তা হল কথা কম বলে কাজ শুরু করে দেয়া। ইগো সম্পন্ন মানুষরা নিজের বড়ত্বের ব্যাপারে কথা বলতে বেশি ভালবাসে। ভবিষ্যতে তারা কি করবে, না করবে, কত বড় বড় কাজ করবে– এইসব কথা বলে বেড়ায়, কিন্তু তেমন কোনও কাজ আসলে করে না।

লেখকের মতে, এই বড় বড় কথা বলার অভ্যাস আসলে মানুষের ভেতর থেকে কাজ করার গতি নষ্ট করে ফেলে। নিজের পরিকল্পনার ব্যাপারে বড় বড় কথা বলতে বলতে নিজের মাঝে একটি অহেতুক আত্মতুষ্টি জন্ম নেয়। তাই কাজ করে সেই পর্যায়ে যাওয়ার আগ্রহ ততটা থাকে না। লেখকের মতে, এই বড় বড় কথা বলার বদলে মানুষ যদি সত্যিকার কাজে নামে, তাহলে কথা বলার শক্তিটি কাজ করার শক্তিতে পরিনত হয়।

কথা না বলে কাজ করার পাশাপাশি লেখক এই অধ্যায়ে অন্য যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন– তা হল বিশ্বাস। একটি সফল কাজ করতে গেলে নিজের প্রতি বিশ্বাস তো অবশ্যই থাকতে হবে। কিন্তু যদি একজন মানুষ সব রকমের ইগোকে জয় করে সাফল্য পেতে চায় সেক্ষেত্রে তাকে অন্যদের ওপরও বিশ্বাস রাখতে হবে।

লেখকের পর্যবেক্ষণ হল, ইগো অনেক সময়ে মানুষকে অন্য মানুষের যোগ্যতার ওপর ভরসা করতে বাধা দেয়। অনেক সময়েই ইগোর কারনে মানুষ ভাবে যে, কিছু কাজ পৃথিবীতে তার থেকে ভাল আর কেউ করতে পারে না।

এই ভাবনার কারনে কিছু মানুষ সব কাজ একাই করতে চায় এবং এর ফলে কাজের ক্ষেত্রে অন্যদের সাথে তার কোনও ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। এছাড়াও অন্যদের সাথে নিয়ে না করার জন্য কাজটি আসলে যত ভাল হতে পারত – ততটা ভাল হয় না।

নিজের প্রতি অতিরিক্ত বিশ্বাসের কারনে মানুষ অন্যের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারে না। এমনকি অন্যদের দক্ষতা সম্পর্কে জানার পরও ইগো সম্পন্ন মানুষ তাদের ওপর ভরসা করতে পারে না– কারন তারা ভাবে সেই কাজ তারা নিজেরা করলেই সবথেকে ভাল হবে।

এই অধ্যায়ে লেখক পাঠকদের বোঝাতে চান যে বিশ্বাস আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। একথা ঠিক যে ঢালাও ভাবে সবার ওপর বিশ্বাস করতে নেই। কিন্তু একটা মানুষকে ভাল করে লক্ষ্য করলে এবং তার কাজ দেখলে তার সততা ও দক্ষতা সম্পর্কে বেশ ভাল ধারনা পাওয়া যায়।

আপনি একজন অসুস্থ ইগো সম্পন্ন মানুষের সাথে দীর্ঘদিন একসাথে কাজ করার পরও সে আপনার ওপর কোনও দায়িত্ব দেয়ার ভরসা পাবে না। কিন্তু এই কারনে অনেক বড় বড় সম্ভাবনাময় প্রজেক্ট যতটা সাফল্য পাওয়ার উচিৎ – ততটা পায় না।

লেখক বলেন, বিশ্বাস একটি কাজের গতিকে অনেক গুণে বাড়িয়ে দেয়। একটি ব্যবসায়ের সাফল্যের গতি সবথেকে বেশি থাকে যখন মালিক, কর্মচারী, অংশীদাররা একে অপরের ওপর ভরসা করে।

একটি প্রজেক্টের কাজ যখন বেশ কয়েকজনের মাঝে ভাগ হয়ে যায় তাহলে একটি কাজের সময়েই বেশ কয়েকটি কাজ একসাথে হয়ে যায়। একটি প্রজেক্টে যদি চারটি ধাপের কাজ থাকে, এবং অফিসে লোকও হয় চারজন। তাদের প্রত্যেকেরই কাজের বিষয়ে ভাল জ্ঞান ও দক্ষতা আছে।

কিন্তু এদের মধ্যে একজন আছে যার ইগোর সমস্যা। সে অন্যদের কাজ করতে না দিয়ে নিজেই পুরো প্রজেক্টটি নামাবে বলে ঠিক করল। এতে করে প্রজেক্ট এর চারটি ধাপ করতে তাকে এক এক করে চার ঘন্টা কাজ করতে হল।

কিন্তু এই কাজটি যদি চারজনে মিলে করত, তাহলে দেখা যেত যে, এক ঘন্টায়ই কাজটি শেষ করা যায়। কিন্তু তার বদলে কাজটি করতে তিন ঘন্টা বেশি সময় নষ্ট হল, কারন একজন মানুষ তার ইগোর কারনে অন্যদের হাতে কাজের কোনও অংশই ছাড়তে চাইছিল না।

লেখকের মতে আপনি যদি ইগোকে জয় করে অন্যদের ওপর বিশ্বাস রাখেন, তাহলে কাজের গতি তো বাড়বেই, সেই সাথে অন্যরাও আপনাকে বিশ্বাস ও সম্মান করবে।

০৩. সাফল্য ব্যর্থতা গ্রহণ পদ্ধতি

যে কোনও কাজে অপ্রত্যাশিত ফলাফল আসলে একটি রাস্তার বাঁকের মত। এই বাঁকে আপনি নিজেকে আরও একটু ভাল করে নেয়ার সুযোগ পাবেন।
এই অপ্রত্যাশিত ফলাফল ভাল খারাপ – দুটোই হতে পারে। আর এই সময়ে ইগো তার বড় চালটা চালে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে ইগোর কারনে আপনি সঠিক পথ থেকে সরে যেতে পারেন। ইগো খারাপ ও ভাল – দুই সময়েই আপনাকে শেষ করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে।

আপনি যখন কোনও খারাপ বা ভুল কিছু করেন, আপনার ইগো আপনাকে সেই ভুল স্বীকার করে সেটা না শুধরে, সেই দায় অন্যের ওপর চাপাতে উৎসাহিত করে। এই পরিস্থিতিতে ইগোর শিকার হলে আপনি কখনওই সেই খারাপ অবস্থার জাল কেটে বের হতে পারবেন না।

আবার যখন আপনি ভাল কিছু করেন অথবা আশার থেকে বেশি সাফল্য পান, তখন আপনার ইগো সেই সাফল্যের জন্য অন্যদের প্রাপ্য কৃতিত্ব দিতে চায়না। ইগো আপনাকে বোঝায় যে, কাজটির পুরো কৃতিত্ব আপনার একার। এই ধরনের ইগোর কারনে সাফল্য ও সম্মান ধরে রাখাটা খুব কঠিন হয়ে যায়।

লেখক এই দুই পরিস্থিতিতেই আপনাকে এমন আচরন করার পরামর্শ দেন যাতে করে ইগো আপনার মনের নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারে। কিভাবে সেটা ?
আপনি যখনই আশার থেকে বেশি ভাল বা খারাপ পরিস্থিতিতে পড়বেন, আপনাকে ভাবতে হবে এটা আপনার নিজের উন্নতি করার জন্য সবচেয়ে ভাল সময়।

আপনি যদি চরম ভাবে ব্যর্থ হন, তবে আপনাকে ভেবে দেখতে হবে সেই ব্যর্থতার পেছনে আপনার নিজের কি কি ভুল ছিল, যেগুলো শুধরে আপনি সেই ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

আবার যদি আশার চেয়ে বেশি সাফল্য পেয়ে যান, তবে ভাবুন, যদি কাজটি সামনে আরও ভালভাবে করা যায় তবে আপনি আরও বেশি সাফল্য পাবেন। যারা আপনার কাজের সময়ে বিভিন্ন ভাবে সমর্থন দিয়েছেন, সব সময়ে তাদের কৃতজ্ঞতা জানান। তাদেরকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ দিন। আপনার এই সাফল্যের পেছনে কার কি অবদান আছে তা ভালকরে মনে করুন। প্রয়োজন হলে কাগজ-কলম নিয়ে বসে যান।

আপনার নিজের ভেতরে অহঙ্কার আর হতাশাকে কখনওই জায়গা দেবেন না। হতাশা একটি দুর্বলতা, যা থেকে অহঙ্কারের মত রোগ দেখা দেয়, আপনার নিজের ভুল গুলোকে মেনে নিতে বাধা দেয়। আর আপনি নিজেও জানেন অহঙ্কার মানুষের পতন ডেকে আনে। সাফল্যে আত্মহারা হয়ে গেলেও সেই একই ঘটনা ঘটে। মনে রাখবেন, একা কেউ সফল হতে পারে না। আপনি যদি খুব ভাল একটি পন্য আবিষ্কার করেন এবং তা থেকে আপনার দারুন লাভ হতে থাকে – মনে রাখবেন, মানুষ যদি আপনার পন্য না কিনত, তাহলে আপনার লাভ হত না।

প্রতিটি নতুন আইডিয়া আসলে আলাদা আলাদা জ্ঞানের মিশ্রণ। আপনি হয়তো বুঝতেও পারেন না, আপনার ‘ইউনিক’ আইডিয়াটি হয়তো দশটি বই পড়ার পরে এসে গেছে। আপনার অবচেতনে দশটি বইয়ের জ্ঞানগুলো মিলেমিশে একটি নতুন জ্ঞানের জন্ম দিয়েছে।

কাজেই সব সময়ে বিনীত থাকুন। ইগোকে কখনওই আপনার ওপর প্রভুত্ব করতে দেবেন না। আপনার যদি নিজেকে পৃথিবীর প্রভু মনে হয়, তবে মনে রাখবেন, আপনি পৃথিবীর প্রভু নন, ইগো আপনার প্রভু হয়ে বসায় আপনার মাথায় এই উদ্ভট ভাবনা এসেছে।

মূল কথা হলোঃ

অনেকের মাঝে ইগো থাকলেও তারা নিজের এই অসুস্থতাটি ধরতে পারেনা, যার কারন তাদের সেই ইগো। আপনার যদি এমন মনে হয় যে আপনার মাঝেও এই ইগোর কিছুটা হলেও আছে, তবে এখনই সময় রায়ান হলিডে’র পরামর্শগুলো কাজে লাগানোর। এক কথায়, শুধুমাত্র একটু দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন করলেই জীবন অনেক সহজ হয়ে যায়, ইগো শুধু জীবনকে জটিল থেকে জটিলই করে।

ইগো’ ও আত্মযাদার পার্থক্য

১) সেল্ফ রেসপেক্ট হলো, আপনি জানেন যে আপনি ভাল মানুষ আর ইগো হলো আপনি মনে করেন যে আপনি অন্য সবার থেকে ভাল। সেল্ফ রেসপেক্ট হলো আপনি জানেন যে আপনি বুদ্ধিমান আর ইগো হলো আপনি মনে করেন যে আপনি সকলের চেয়ে জ্ঞানি।

২) সেল্ফরেসপেক্ট যখন তার সীমারেখা ক্রস করে এবং অপরকে আঘাত করতে শুর করে তখন সেটা ইগোতে রুপান্তরিত হয়।

৩) ইগো তৈরী হয় হলো স্ফীত আত্মসম্মান থেকে এবং আত্নসম্মানবোধ বা সেল্ফ রেসপেক্ট তৈরী হয় হলো সত্য এবং মিথ্যার পার্থক্য অনুধাবন করার মধ্যদিয়ে।

৪) ইগো হলো কষ্টদায়ক অহংকার আর ‘সেল্ফ রেসপেক্ট’ হলো সমাজে নিজের সঠিক মর্যাদা অনুধাবন করতে পারা।

৫) সেল্ফ রেসপেক্ট হলো সব সময় ধ্রুব সত্য এবং ইগো নিজ থেকে প্রকাশ করা।

৬) ইগো হলো কোন কিছুর প্রতি নিজস্ব ভংগিমা বা নিজের অবস্থান যেটাকে ব্যাক্তির এটিটিউড ও বলা যায়।

৭) ইগো হলো মর্যাদা আদায় করার চেষ্টা। সেল্ফ রেসপেক্ট হলো নিচু হওয়া।

৮) ইগোর মানে হলো এটা মনে করা যে, আমি হলাম এই পৃথিবীর জন্য একটা বড় উপহার। আমি হলাম সকলের মধ্যমনি। কাজেই আমাকে ঘিরেই সকল কর্ম সম্পাদন হওয়া উচিত। আর সেল্ফ রেসপেক্ট হলো নিজের লিমিটেশন সমন্ধে অবগত হওয়া। এবং নিজের মধ্যে যেই দক্ষতা আছে সেটা জাহির করতে না চাওয়া।

৯) সেল্ফ রেসপেক্ট হলো নিজের উপর বিশ্বাস রাখা আর ইগো হলো নিজেকে অপরের চেয়ে ভাল মনে করা।

১০) ইগো হলো কেবল নিজেকে নিয়েই চিন্তা করা, মানুষ তার সমন্ধে কি বললো বা না বললো সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করা। সেল্ফ রেসপেক্ট হলো নিজেকে নিয়ে চিন্তা করার পাশাপশি অন্যদের ধ্যানধারনা নিয়েও চিন্তা করা।

১১. কেহ কেহ বলেন: যার মধ্যে অতিমাত্রায় ইগো থাকে তার মধ্যে জিরো মাত্রায় ‘সেল্ফ রেসপেক্ট’ থাকে।

 

অহংকার কি? অহংকারের কারনসমূহ?

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা. হতে বর্ণিত, রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, যার অন্তরে একটি অণু পরিমাণ অহংকার থাকে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এ কথা বললে, এক লোক দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, কোন কোন লোক এমন আছে, সে সুন্দর কাপড় পরিধান করতে পছন্দ করে, সুন্দর জুতা পরিধান করতে পছন্দ করে, এসবকে কি অহংকার বলা হবে? উত্তরে রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, আল্লাহর তা‘আলা নিজেই সুন্দর, তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন। [সুন্দুর কাপড় পরিধান করা অহংকার নয়] অহংকার হল, সত্যকে গোপন করা এবং মানুষকে নিকৃষ্ট বলে জানা]

অহংকার ও ‘আত্মতৃপ্তির মধ্যে পার্থক্য

আবু ওহাব আল-মারওয়ারজি রহ. বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারককে জিজ্ঞাসা করলাম কিবির কি? উত্তরে তিনি বলেন, মানুষকে অবজ্ঞা করা। তারপর আমি তাকে উজব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘উজব কি? উত্তরে তিনি বললেন, তুমি তোমাকে মনে করলে যে, তোমার নিকট এমন কিছু আছে, যা অন্যদের মধ্যে নাই। তিনি বলেন, নামাজিদের মধ্যে ‘উজব বা আত্মতৃপ্তির চেয়ে খারাপ আর কোন মারাত্মক ত্রুটি আমি দেখতে পাই না।

অহংকারের কারণসমূহ নিম্নরূপ:

১. কারো প্রতি নমনীয় না হওয়া

একজন অহংকারী কখনোই চায় না, সে কারো আনুগত্য করুক বা কারো কোন কথা শুনুক। সে চিন্তা করে আমার কথা মানুষ শোনবে আমি কেন মানুষের কথা শোনবো। আমি মানুষকে উপদেশ দেবো আমাকে কেন মানুষ উপদেশ দেবে।

২. অন্যদের উপর প্রাধান্য বিস্তারের জন্য অপ্রতিরোধ্য অভিলাষ

একজন অহংকারী, সে মনে করে, সমাজে তার প্রাধান্য বিস্তার, সবার নিকট প্রসিদ্ধি লাভ ও নেতৃত্ব দেয়ার কোন বিকল্প নাই। তাকে এ লক্ষ্যে সফল হতেই হবে।

৩. নিজের দোষকে আড়াল করা

একজন অহংকারী তার স্বীয় কাজ কর্মে নিজের মধ্যে যে সব দুর্বলতা অনুভব করে, তা গোপন রাখতে আগ্রহী হয়। যেহেতু একজন অহংকারী সব সময় মানুষের চোখে বড় হতে চায়, এ কারণে সে পছন্দ করে, তার মধ্যে যে সব দুর্বলতা আছে, তা যেন কারো নিকট প্রকাশ না পায় এবং কেউ যাতে জানতে না পারে। কিন্তু মূলত: সে তার অহংকার দ্বারা নিজেকে অপমানই করে, মানুষকে সে নিজেই তার গোপনীয় বিষয়ের দিকে পথ দেখায়। কারণ, সে যখন নিজেকে বড় করে দেখায়, তখন মানুষ তার বাস্তব অবস্থা জানার জন্য তার সম্পর্কে গবেষণা করতে আরম্ভ করে, তার কোথায় কি আছে, না আছে তা অনুসন্ধান করতে থাকে। তখন তার আসল চেহারা প্রকাশ পায়, আসল রূপ খুলে যায়, তার যাবতীয় দুর্বলতা প্রকাশ পায় এবং তার অবস্থান সম্পর্কে মানুষ বুঝতে পারে। ফলে মানুষ আর তাকে শ্রদ্ধা করে না, বড় করে দেখে না, তাকে নিকৃষ্ট মনে করে এবং ঘৃণা করে।

৪. কিছু লোকের অধিক বিনয়ের কারণে অহংকারীরা অহংকারের সুযোগ পায়।

অহংকারীরা যখনই কোন সুযোগ পায়, তা তারা কাজে লাগাতে কার্পণ্য করে না। অনেক সময় দেখা যায় কিছু লোক এমন আছে, যারা বিনয় করতে গিয়ে অধিক বাড়াবাড়ি করে, তারা নিজেদের খুব ছোট মনে করে, নিজেকে যে কোন প্রকার দায়িত্ব আদায়ের অযোগ্য বিবেচনা করে এবং যে কোন ধরনের আমানতদারিতা রক্ষা করতে সে অক্ষম বলে দাবি করে, তখন অহংকারী চিন্তা করে এরা সবাইতো নিজেদের অযোগ্য ও আমাকে যোগ্য মনে করছে, প্রকারান্তরে তারা সবাই আমার মর্যাদাকে স্বীকার করছে, তাহলে আমিই এসব কাজের জন্য একমাত্র যোগ্য ও উপযুক্ত ব্যক্তি। সুতরাং, আমিতো তাদের সবার উপর নেতা। শয়তান তাকে এভাবে প্রলোভন দিতে ও ফুঁসলাতে থাকে, আর লোকটি নিজে নিজে ফুলতে থাকে। ফলে এখন সে অহংকার বশতঃ আর কাউকে পাত্তা দেয় না সবাইকে নিকৃষ্ট মনে করে। আর নিজেকে যোগ্য মনে করে।

৫. মানুষকে মূল্যায়ন করতে না জানা

অহংকারের অন্যতম কারণ হল, মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড নির্ধারণে ত্রুটি করা। যারা ধনী ও পদ মর্যাদার অধিকারী তাদের প্রাধান্য দেয়া হয়ে থাকে, যদিও তারা পাপী বা অপরাধী হয়। অনুপযুক্ত ও অযোগ্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব বা নেতৃত্ব দেয়ার কারণে, স্বার্থান্বেষী ও ভোগবাদীরা, হোমরাচোমরা ক্ষমতাবান হওয়ার কারণে তারা অন্যদের নিকৃষ্ট মনে করে এবং তাদের উপর বড়াই দেখায় ও অহংকার করে।

অহংকারিদের ব্যাপারে আল কোরআনে যা বলা হয়েছে-

১। অহংকারীরা চিরকাল জাহান্নামী (নাহল ২৯) (যুমার ৭২) (আরাফ ৩৬)
২। অহংকারী সেজদাকারীদের অন্তভূর্ক্ত না এবং তারা কাফের (বাকারা ৩৪) (যুমার ৬৯)
৩। সূচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করা যেমন অসম্ভব তেমনি কোন অহংকারীও জান্নাতে প্রবেশ করা সম্ভব না (আরাফ ৪০)
৪। অহংকারীরা দাসত্ব করায় লজ্জাবোধ করে (নিসা ১৭২)
৫। অহংকারীদের অন্তর সত্যবিমুখ। (নহল ২২)
৬। অহংকারীরা আল্লাহর ইবাদাতেও অহংকার করে (আম্বিয়া ১৯)
৭। অহংকারীরা মানুষকে অবজ্ঞা করে এবং পৃথিবীতে গর্বের সাথে চলাফেরা করে (লোকমান ১৮)
৮। অহংকারীরা রসূলদের নির্দেশ অমান্যকারী (বাকারা ৮৭)
৯। অহংকারী আল্লাহর উপর অসত্য আরোপ করে এবং আল্লাহর বানী অস্বীকার করে (আনআম ৯৩)
১০। অহংকারীরা আল্লাহর নেয়ামত পেলে দূরে সরে যায় (বণী ইসরাইল ৮৩)
১১। অহংকারী হীনতমদের অন্তর্ভূক্ত (আরাফ ১৩)
১২। অহংকারীরা পালনকর্তার সাক্ষাতে বিশ্বাসী না এবং তারা অবাধ্য (ফুরকান ২১)
১৩। অহংকারীরা আল্লাহর নিদর্শনগুলো দেখেও দেখে না এবং প্রত্যাখ্যান করে (নমল ১৪)
১৪। অহংকারীরা হয়রান ও পেরেশান থাকে (বাকারা ১৫)
১৫। ঈমান তাদেরই আছে যারা অহংকারমুক্ত। (আস সেজদাহ ১৫)
১৬। প্রকৃত সেজদাকারী তারাই যারা অহংকার মুক্ত। (আস সেজদাহ ১৫)
১৭। অহংকারীরা কাফের ও বিরোধিতায় লিপ্ত (সোয়াদ ২)
১৮। অহংকারীরা ইবলিশ ও অস্বীকারকারীদের অন্তর্ভূক্ত। (সোয়াদ ৭৪)
১৯। কেয়ামতের দিন অহংকারীদের মুখ কালো থাকবে (যুমার ৬০)
২০। অহংকারীরা অবিবেচক (আহক্বাফ ১০)
২১। অহংকারীদের অন্তর মোহর মেরে দেয়া হয়েছে (মুমিন ৩৫)
২২। আল্লাহর ইবাদাতে যারা অহংকার করে তারা জাহান্নামী (মুমিন ৬০)
২৩। অহংকারীদের জন্য নরকের অগ্নিসজ্জা আছে (আরাফ ৪১)

ইগো সম্পর্কে উক্তি:

০১. “ইগো যদি কারও বাহন হয়, তবে সে কোথাও পৌঁছতে পারবে না”
– রবার্ট হ্যাল্‌ফ (আমেরিকান উদ্যোক্তা)
০২. “ইগো হল বোকাদের বোকা হওয়ার যন্ত্রণা লুকানোর উপায়”
– ড. হারবার্ট স্কোফিল্ড (১৯ শতকের ইংলিশ স্কলার ও শিক্ষক)
০৩. “তুমি যখন তোমার ইগোকে চিনতে পারবে, তখন বুঝবে এটা আসলে তোমার মনের ভেতরে সৃষ্টি হওয়া কিছু অর্থহীন কথা”
– ইকহার্ট টলি (কানাডিয়ান বেস্ট সেলিং লেখক)
০৪. “ইগো মানুষকে অচেতন করে রাখে। চেতনা আর ইগো কখনও একসাথে থাকতে পারে না”
– ইকহার্ড টলি
০৫. “ইগো মানুষের নিজেকে নিজে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাকে নি:শব্দে নষ্ট করে ফেলে”
– কলিন হাইটাওয়ার (আমেরিকান লেখক)
০৬. “ইগো মানুষের সুবুদ্ধির পথে অন্যতম বাধা”
– মারিয়ান মুর (আমেরিকান কবি)
০৭. “সত্যিকার বড় হতে চাইলে ইগোকে বন্দী করে রাখো…”
– মেরি রবার্টস রিনহার্ট (বিখ্যাত লেখিকা)
০৮. “ইগোইস্ট মানে এমন একজন মানুষ যে অন্য সবাইকে ছোট করে দেখে”
– জোসেফ ফোর্ট নিউটন (ধর্মীয় নেতা ও লেখক)
০৯. “একজন মানুষের ইগো ভাঙার মূহুর্তের চেয়ে ভালো মূহুর্ত আর একটিও নেই”
– ববি ফিশার (সর্বকালের সেরা দাবা খেলোয়াড়)
১০. “ইগোর মৃত্যু মানে আত্মার জাগরণ”– মহাত্মা গান্ধী
১১. “ইগো হলো চোখে জমে থাকা ধুলোর মত। চোখের ধুলো পরিস্কার না হলে যেমন কিছু দেখা যায় না; তেমনি ইগো দূর না হলে সত্যিকার জগতকে দেখা যায় না”– সংগৃহীত
১২. “ইগো সত্যিকার জ্ঞানী হওয়ার পথে একটি প্রধান বাধা”
– ড্যানিয়েল লা-পোর্ত (কানাডিয়ান বেস্ট সেলিং লেখিকা)
১৩. “যাদের ইগো বড়, তাদের জানার ক্ষমতা ছোট”
– রবার্ট স্কুলার (আমেরিকান ধর্মীয় বক্তা ও লেখক)
১৪. “বড় চিন্তা সব সময়ে হৃদয় থেকে আসে, ইগো থেকে এটা আসা সম্ভব নয়”– সংগৃহীত
১৫. “তোমার ইগো কখনওই সত্যিকার তোমাকে ধারণ করে না। এটা একটা মুখোশ, একটা অভিনয়। এটা সব সময়ে অন্যের প্রশংসার ওপর নির্ভর করে। এটা সব নিজেকে শক্তিশালী ভাবতে চায় – কারণ সে সব সময়ে পরাজয়ের ভয় করে” – রাম দাস (ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ও লেখক)
১৬. “ইগোহীন আত্মবিশ্বাসই সত্যিকার আত্মবিশ্বাস। আত্মবিশ্বাসের সাথে ইগো মিশে থাকলে, তা কখনওই খাঁটি আত্মবিশ্বাস নয়” – সংগৃহীত
১৭. “অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা ইগোর সবচেয়ে বড় একটি অস্ত্র। এটা না হলে সে নিজেকে শক্তিশালী করতে পারে না” – ইকহার্ট টলি (কানাডিয়ান লেখক)
১৮. “যার জ্ঞান যত বেশি, তার ইগো তত কম। জ্ঞান কম, মানে ইগো বেশি”– আলবার্ট আইনস্টাইন
১৯. “প্রতিভাকে খুন করা হল ইগোর সবচেয়ে বড় শক্তি”– সংগৃহীত
২০. “যে কোনও বড় অর্জনের পথে ইগো হল সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা” – রিচার্ড রোস (কবি ও দার্শনিক)
২১. “পৃথিবীর যাবতীয় বিবাদ, যুদ্ধ আর ব্যর্থতার জন্য যদি মাত্র একটি জিনিসকে দায়ী করা হয় – তা হবে মানুষের ইগো”– সংগৃহীত
২২. “ভালোবাসা অন্যকে কিছু দিতে পেরে সুখী হয়। ইগো ছিনিয়ে নিয়ে সুখী হয়”
২৩. “ওপরে ওঠার সময়ে ইগো মানুষকে কুকুরের মত অনুসরন করে”
– ফ্রেডরিচ নিডসে (জার্মান দার্শনিক )
২৪. “ভুল বোঝাবুঝি দূর করার প্রথম শর্ত হল ইগোকে হত্যা করা”
২৫. “নিজের শুণ্যতাকে ঢাকার সবচেয়ে বাজে ও অকার্যকর ঢাল হল ইগো”– সংগৃহীত
২৬. “কেউ তোমার ভুল ধরিয়ে দিলে যদি তুমি অপমান বোধ কর, তোমার মাঝে ইগো সমস্যা আছে”
– নোমান আলী খান (আমেরিকান ইসলামিক স্কলার)
২৭. “ইগো অন্যের কাছে বড় হওয়ার নিরন্তর চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়”– অ্যালান ওয়াটস্‌ (বৃটিশ দার্শনিক)
২৮. “ইগো তোমার সবচেয়ে বড় শত্রু। সে সব সময়ে তোমাকে থামিয়ে রাখতে চাইবে”
– ফ্র্যাঙ্ক কার্লটন (আমেরিকান গায়ক ও লেখক)
২৯. “তুমি যখন বিচক্ষণ হতে থাকবে, তখন ইগোও জানালা দিয়ে পালাতে শুরু করবে”
– বিলি ওশান (ত্রিনিদাদিয়ান শিল্পী)

৩০. “যারা ভাবে যে তারা সবার চেয়ে বেশি জানে, তারা সত্যিকার জ্ঞানীদের কাছে বিরক্তিকর”
– আইজ্যাক আসিমভ্ (বিশ্বখ্যাত লেখক) ##

গ্রন্থনা: ফয়েজ উল্লাহ ভূঁইয়া

ফেসবুকে আমাদের ফলো করুন এখানে ক্লিক করে

এবং আমাদের ভিডিওহুলো দেখতে এখানে ক্লিক করুন

পৃথিবীর একমাত্র বায়োনিক চাইল্ড অলিভিয়া, যার শরীরে নেই ব্যথা, ঘুম ও খিদে

তখন মেয়েটির বয়স সবে সাত বছর। মায়ের সঙ্গে সে হাঁটতে বের হয়। তবে কিছুতেই মায়ের হাত ধরবে না। নিজের খেয়াল মতো রাস্তা পার হতে গিয়ে ভয়ঙ্কর এক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সে। ছোট্ট শরীরটাকে ধাক্কা মারার পর ঠেলতে ঠেলতে ১০০ ফুট দূরে নিয়ে গিয়েছিলো একটি গাড়ি। ২০১৬ সালে ঘটানাটি ঘটে। পথচলতি লোকেরা চিৎকার করে ওঠে। মাথা চাপড়াতে চাপড়াতে ছুটে যায় মেয়েটির মা। তিনি ও বাকি সবাই নিশ্চিত ছিলেন যে, মেয়েটি আর বেঁচে নেই। তবে সবাইকে চমকে দিয়ে মেয়েটি উঠে দাঁড়িয়ে মায়ের কাছে ফিরে আসে। তার মুখে একটুও ভয় বা আতঙ্ক নেই। মেয়ের হাসিমুখের অভিব্যক্তি দেখে তার মায়ের মনে হচ্ছিল সে বলতে চাইছিলো,‘কী হয়েছে এত চিন্তার কী আছে?’
ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার পর তার শরীরে কয়েকটি আঁচড়ের দাগ ছাড়া আর কিছু আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পুরো শরীর স্ক্যান করেও ভেতরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ডাক্তাররা নিশ্চিত হলেন কোনো অবস্থাতেই মেয়েটি যন্ত্রণা অনুভব করে না। শুধু ব্যথা নয় খিদে এমনকি ঘুমও আসে না তার। অবাক হচ্ছেন? হ্যাঁ, সত্যিই এমন এক মেয়ে আছে এই বিশ্বে। তার নাম লৌহমানবী অলিভিয়া ।

লৌহমানবী অলিভিয়া ২০০৯ সালে ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারের কাছে হাডারফিল্ড নামের শহরের ফার্নসওয়ার্থ নামক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । গৃহকর্তা রিড, তার স্ত্রী নিকি ও তাদের পাঁচ ছেলেমেয়ে নিয়ে গড়া সাধারণ মধ্যবিত্ত এক ব্রিটিশ পরিবার। পৃথিবীর অধিকাংশ চিকিৎসক আজ এই পরিবারটিকে চেনেন। এর কারণ হলো তাদের দ্বিতীয় মেয়ে অলিভিয়া।
১০ বছর বয়সী অলিভিয়া পৃথিবীতে অদ্বিতীয়। অলিভিয়ার এমন তিনটি বৈশিষ্ট্য আছে যা পৃথিবীতে আর কারও নেই। যা ওই অতি ক্ষুদ্র মেয়েটিকে করে তুলেছে অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন। ছোট্ট অলিভিয়া দিনের পর দিন না খেয়ে, না ঘুমিয়ে থাকতে পারে এবং যত বড় আঘাতই পাক না কেন অলিভিয়ার যন্ত্রণা লাগে না। ১০ বছরের জীবনে একদিনও কাঁদেনি অলিভিয়া।

ফার্নসওয়ার্থ পরিবারে দ্বিতীয় কন্যা ফুটফুটে অলিভিয়া। কয়েক মাসের মধ্যে বাবা-মা তাদের মেয়ের অলিভিয়ার কাণ্ড দেখে আতঙ্কিত হলেন। ছুটলেন ডাক্তারের কাছে। ডাক্তারকে বলেন, তাদের মেয়ে অলিভিয়া খিদে পেলে কাঁদে না, দিনে রাতে একদম ঘুমায় না, কোনো ধরনের আঘাত পেলেও কাঁদে না। ডাক্তার হেসে দম্পতিকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, এটা স্বাভাবিক। আপনারা বেশি খাইয়ে দিচ্ছেন তাই ক্ষুধায় কাঁদছে না। আর ঘুমটা নিয়ে সব বাবা-মা’র চিন্তা, ওটা নিয়ে চিন্তা করবেন না। কিছুদিন পরেই ঠিক হয়ে যাবে।

ধীরে ধীরে বড় হয়েছে অলিভিয়া, মা-বাবা খিদের জ্বালায় মেয়ে কাঁদে না দেখে বাবা-মা তাকে জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করতেন। অনেক চেষ্টার পরও অলিভিয়া যদিও সামান্য কিছু খেতো, কিন্তু কখনো ঘুমোতে চাইতো না। সারাক্ষণ তাকে নিয়ে খেলতে হতো। পরিবারের সবাই যখন ঘুমে মগ্ন থাকে অলিভিয়া তখন ছোট্ট পায় টলতে টলতে সারা বাড়ি জুড়ে সারা রাত ধরে ঘোরাঘুরি করতো। বাধ্য হয়ে বাবা-মা রাতে শিশু অলিভিয়াকে একটি খালি ঘরে খেলনা দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিতেন। তাদেরও তো ঘুমোতে হবে, না ঘুমিয়ে তারাও অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন।

ডাক্তার বললেন, এক জটিল গঠনগত ত্রুটির শিকার হয়েছে অলিভিয়া। তবে এক বছরের মধ্যেও অলিভিয়ার এই সব অভ্যাসের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাই অন্য এক ডাক্তারের কাছে যান তার বাবা-মা। সব শুনে সেই ডাক্তার অলিভিয়াকে পাঠিয়েছিলেন একটি ল্যাবরেটরিতে। সেখানে অলিভিয়ার ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের কাছে যান তার বাবা-মা। রিপোর্টটি দেখে ডাক্তারের মুখ বিমর্ষ হয়ে যায়। সে বিভিন্ন জায়গায় অনেক ফোন করেন। এরপর ডাক্তার রিপোর্টটি পাঠিয়েছিলেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে।

কয়েকদিন পর অলিভিয়ার বাবা-মাকে ডাক্তার বলেন, আসলে অলিভিয়া ক্রোমোজোম সিক্স পি ডিলেশন নামক একটি জটিল গঠনগত ত্রুটির শিকার। তাই অলিভিয়ার ক্ষুধা ও ঘুম পায় না। অলিভিয়ার বাবা-মাকে ডাক্তার বলেছিলেন, এ রোগের কোনো ওষুধ নেই। অলিভিয়াকে বাঁচাতে গেলে তাকে সময়ে সময়ে খাইয়ে দিতে হবে, কিন্তু ঘুমের জন্য কিছু করতে পারবো না। কারণ এইটুকু মেয়েকে ঘুমের ওষুধ দেয়া যাবে না। যেহেতু না ঘুমিয়েও সে সুস্থ আছে তাহলে সেভাবেই তাকে থাকতে দিন।

কী এই ক্রোমোজোম সিক্স পি ডিলেশন?

মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় ভ্রুণের কোষগুলো বারবার বিভাজিত হয়ে নতুন কোষ তৈরি করতে থাকে, ফলে গর্ভস্থ সন্তানের দেহে কোষের সংখ্যা দ্রুত ও ক্রমাগত বাড়তে থাকে। অলিভিয়া যখন মায়ের পেটে বেড়ে উঠছিলো, তার কোষের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছিলো।

তবে বিভাজনের ত্রুটির জন্য অলিভিয়ার দেহের কোষগুলোতে সিক্স পি নামক ক্রোমোজোম উপাদানটি ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই ভূমিষ্ঠ হয় অলিভিয়া। তবে কোষের ত্রুটি স্থায়ীভাবেই থেকে গিয়েছিলো অলিভিয়ার দেহে। অলিভিয়ার দেহ থেকে সিক্স পি নামক ক্রোমোজোম মুছে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অলিভিয়ার খিদে, ঘুম এবং ব্যথা পাওয়ার অনুভুতিও তার জীবন থেকে মুছে যায়।
অপমান করলে ভয়ঙ্কর উত্তেজিত হয় অলিভিয়া। ডাক্তারের কথা মতো, অলিভিয়ার বাবা-মা মেয়েকে বড় করতে থাকেন। তারপর অলিভিয়া স্কুলে ভর্তি হয়। দিন-রাত জেগে থেকেও স্কুলের মেধাবী ছাত্রী সে। পরীক্ষায় অলিভিয়ার নাম্বার সবচেয়ে বেশি থাকে। খেলাধুলাতেও সে স্কুলে পিছিয়ে থাকে না। তবে শান্ত ও হাসিখুশি অলিভিয়ার একটাই দোষ, কেউ তাকে অপমান করলে সে ভয়ঙ্কর উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তখন অলিভিয়া আক্রোশবশত কোনো জিনিস দিয়ে আঘাত করে সেই মানুষটিকে বা নিজের মাথা দেওয়ালে ঠোঁকে।

 

আরও পড়ুনঃ

সাপে কাটলে কি করতে হবে? সাপ নিয়ে আমরা মুভিতে যা দেখি কতটুকু সত্যি!

মধ্যবিত্তরা সর্বস্বান্ত হন যে কারণে ! মধ্যবিত্তদের গরিব হওয়া ঠেকাবে কে?

বুদ্ধিমান বা স্মার্ট হওয়ার কিছু সহজ উপায় বা কার্যকরি পন্থা

মেয়েদের ব্যাপারে কিছু অজানা তথ্য ও সাইকোলজিক্যাল পরিসংখ্যান

সাইকোলজিস্ট, সাইক্রিয়াটিস্ট কিছুই বাদ দেননি অলিভিয়ার বাবা-মা। কিন্তু তারা বলেছিলেন,তাদের কিছু করার নেই। এসব হচ্ছে অলিভিয়ার ক্রোমোজোমের গঠনগত সমস্যার উপসর্গ। ওষুধ দেয়া যাবে না কারণ অলিভিয়া ওইটুকু সময় বাদ ছাড়া বাকি সময় সম্পূর্ণ সুস্থ ও হাসিখুশি থাকে।

ধরা পড়েছিল অলিভিয়ার আরেক অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য রোজ বিকেলে বাড়ির সামনের পার্কে তার ভাই-বোনদের সঙ্গে খেলা করতে যেতো অলিভিয়া। একদিন অলিভিয়া একা গিয়েছিলো পার্কে।

সেখান থেকে ফেরার পর অলিভিয়াকে দেখে আতঙ্কে চেঁচিয়ে উঠেছিলেন মা নিকি। অলিভিয়ার নিচের ঠোঁটের অর্ধেকটা কেটে ঝুলছিল। জামা রক্তে ভেজা, কিন্তু অলিভিয়ার মুখে হাসি। আতঙ্কিত মায়ের পাশ দিয়ে ঘরে ঢুকে জুতো খুলতে শুরু করেছিলো অলিভিয়া। মুখে একটুও ব্যথার অভিব্যক্তি ছিল না তার।

হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল অলিভিয়াকে, প্রথমে স্টিচ ও পরে প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়। পুরো সময়টিতে একটু কাঁদেনি অলিভিয়া। হাসিমুখে ইনজেকশনের পর ইনজেকশন নিয়েছিলো। ডাক্তাররা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন ‘ইস্পাত’ কঠিন মানসিকতার মেয়েটিকে দেখে। তারপরে অসংখ্য বার আঘাত পেয়েছে লৌহমানবী অলিভিয়া। কিন্তু তার মুখ থেকে একবার ‘আহ” শব্দটিও বের হয়নি।

অলিভিয়া পৃথিবীর একমাত্র ‘সুপার হিউম্যান’ এই দুর্ঘটনার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ডাক্তারদের সঙ্গে লৌহমানবী অলিভিয়ার ডাক্তারদের ফোন এবং ই-মেল চালাচালি এবং পৃথিবীব্যাপী সার্ভে রিপোর্টের আদানপ্রদান শুরু হয়েছিলো। কিছুদিন পরে এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা অলিভিয়াকে পৃথিবীর প্রথম ‘বায়োনিক চাইল্ড’ ঘোষণা করেছিলেন।

“এর অর্থ হলো অলিভিয়া অস্বাভাবিক ক্ষমতাযুক্ত একটি শরীর ও মন নিয়ে জন্মেছে, এই পৃথিবীতে অলিভিয়ার মতো সহ্যশক্তি আর কারো নেই।”

অলিভিয়া কয়েকমাস না ঘুমিয়ে, কয়েক সপ্তাহ না খেয়ে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারে, আর তার শরীর যেকোনো আঘাত ও যন্ত্রণা সহ্য করতে পারে ঠিক রোবটের মতো। এই তিনটি বৈশিষ্ট্য সম্মিলিতভাবে বিশ্বে আর কোনো মানুষের দেহে কখনো দেখা যায়নি।

সারা পৃথিবী তন্ন তন্ন করে খুঁজে আজ অবধি ১০০ জনকে পাওয়া গেছে যাদের সিক্স পি নামক ক্রোমোজোম ব্যাধিগ্রস্ত আছে। কিন্তু চিকিৎসাশাস্ত্রের ইতিহাসে অলিভিয়াই প্রথম মানুষ যার শরীরে কোন ব্যথা, ঘুম,ক্ষুধা নেই এই তিনটি উপসর্গই আছে।

ভাবলেই অবাক লাগে শারীরিক ত্রুটি আজ লৌহমানবী অলিভিয়াকে বিশ্ব বিখ্যাত করে তুলেছে। করে তুলেছে বিশ্ব ইতিহাসের প্রথম সুপার হিউম্যান।

Follow Us on Facebook page and See our videos on YouTube

 

ধুমকেতু গুলো ঠিক কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিলো, ধুমকেতুর নামকরণ করা হয় কিভাবে?

সুর্যের চারপাশে আবর্তনরত ধুমকেতুগুলোকে দুভাগে ভাগ করা যায়।

i) স্বল্পস্হায়ী ধূমকেতু (Short Period Comet) এবং

ii) দীর্ঘস্হায়ী ধূমকেতু (Long Period Comet)।

সৌরজগতে ধুমকেতুগুলো অতীতে ঠিক কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিলো তা বেশ অজানা।
তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় ধারনা করা হয়, সৌরজগত সৃষ্টির সময়ই ধূমকেতুগুলো কোনভাবে সৃষ্টি হয়েছিলো
এবং সেগুলো স্হায়ীভাবে সৌরজগত সৃষ্টির পর অবশিষ্ট বস্তু দ্বারা গঠিত কুইপার বেল্ট এবং ওর্ট মেঘেই অবস্হান করছে।
ধারনা করা হয়, স্বল্প মেয়াদী কক্ষপথের ধূমকেতুগুলোর সৃষ্টি হয় কুইপার বেল্ট থেকে এবং দীর্ঘ কক্ষপথের ধুমকেতুগুলো সৃষ্টি হয় ওর্ট মেঘ থেকে।
কুইপার বেল্ট ওর্ট মেঘ থেকে সুর্যের নিকটবর্তী হওয়ায় সেখান থেকে আসা ধুমকেতুর সুর্যকে আবর্তন করতে সময় লাগে কম।

এরকম ধুমকেতুর একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরন হলো হ্যালির ধূমকেতু, যার আবর্তন কাল প্রায় ৭৬ বছর।
আর, তাই তা ৭৬ বছর পর পর সুর্যের নিকটবর্তী হয় এবং তাকে আমরা দেখতে পাই।
কিন্তু ওর্ট মেঘ অনেক দুরে থাকায় সেখান থেকে আসা ধুমকেতুগুলোর আবর্তনে সময়ও লাগে অনেক।
এমনকি অনেক ধূমকেতুর তা কয়েক মিলয়ন বছরও লেগে যায়।
যেমনঃ হায়াকুটেক (Comet Hyakutake) ধুমকেতু প্রায় প্রতি ৭০,০০০ বছরে সুর্যকে প্রদক্ষিণ করে।
আর তাই তাকে আমরা প্রতি ৭০,০০০ বছর পর পর দেখতে পাবো।
সুদুর অতীত থেকেই ধুমকেতুগুলো সৌরজগতের এসব দুরবর্তী অন্ঞ্চলে থেকে সুর্যকে একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে চলেছে।
স্বল্পমেয়াদী ধূমকেতুগুলোর আবর্তনকাল সাধারনত ২০০ বছরের মধ্যেই হয় এবং দীর্ঘমেয়াদী ধুমকেতুগুলোর তা ২০০ বছর হতে বহু হাজার বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে।

.ধুমকেতুর নামকরণ করা হয় যেভাবে:

ধুমকেতুর নামকরণ করা হয় সাধারনত তার আবিষ্কারকের নামানুসারে৷
যেমনঃ এডমন্ড হ্যালি কতৃক আবিষ্কৃত ধুমকেতুর নাম রাখা হয় Hally’s Comet,
ক্যারোলিন শোমেকার এবং ডেভিড লেভি কতৃক আবিষ্কৃত ধুমকেতুর নামকরন করা হয় Shoemaker-Lavy-9।
তবে আবার বিভিন্ন মিশন চালনার মাধ্যমেও ধুমকেতু শনাক্ত করা হয়। তখন তাদের নামকরণ করা হয় সেসব মিশনের নামানুযায়ী।

যদি কোন ধুমকেতু কোনভাবে দু’জন কতৃক আবিষ্কৃত হয় তবে প্রথম আবিষ্কারকর্তার নামেই ধুমকেতুর নামকরন করা হয়।
কোন ধুমকেতুর নামের পুর্বে যদি “C” উল্লেখ থাকে তবে এ দ্বারা বোঝায় ধুমকেতুটি Long Period Comet, যার আবর্তনকাল ২০০ বছরের বেশি।
যদি নামের আগে “P” থাকে তবে এর মানে ধুমকেতুটি Short period comet এবং periodic,
যার দ্বারা বোঝায় ধূমকেতুটির আবর্তনকাল ২০০ বছরের কম এবং তা নির্দিষ্ট সময় পর পর পুনরায় সুর্যের নিকট আসে।
যেমনঃ হ্যালির ধুমকেতু। যদি নামের আগে “D” থাকে তা দ্বারা বোঝায় “Destroyed”, এর মানে ধুমকেতুটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
যেমনঃ D/Shoemaker-Levy 9, এটি ধ্বংস হয়ে যাওয়া ধুমকেতু।
এরকমভাবে ধুমকেতুর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিভিন্ন কিছু অক্ষরযুক্ত করে এদের নামকরন করা হয়।

পৃথিবীতে পানির প্রাথমিক উৎস হিসাবে ধুমকেতুকেই দায়ী করা হয়।
সুদুর অতীতে সৌরজগতের গ্রহগুলো সৃষ্টির সময় পৃথিবীতে অনেক ধুমকেতু আছড়ে পড়তো এবং এতে ধূমকেতুতে থাকা পানি জমা হতে থাকে পৃষ্ঠে।
এতে করেই পৃথিবীতে পানির সন্ঞ্চারণ ঘটে।
তবে সমস্ত পানির উৎস না হলেও নূন্যতম সাগর মহাসাগরের পানির প্রধান অংশই ধুমকেতু থেকে এসেছে বলে গবেষণায় পাওয়া গেছে।
আপনি কি মনে করেন এ ব্যাপারে তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না,
আজ এ পর্যন্তই , ভালো লাগলে লাইক করুন,বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
আর এমনি মজার সব তথ্য পেতে আমাদের  সাবস্ক্রাইব করে দিন
সবসময়ের মতই পড়ার জন্য ধন্যবাদ

আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন এবং আমাদের ভিডিওগুলো দেখতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি ঘুরে আসুন

Read More:

প্যারালাল ইউনিভার্স কি? প্যারালাল ইউনিভার্স সম্পর্কে বিস্তারিত